পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত ২১৯ তার স্বামী সেবার রামসাগরের চড়কের মেলায় মনোহারী জিনিস বিক্রী করতে গেল । যাবার সময় নিস্তারিণী বল্লে—ওগো আমার জন্তি কি আনবা । —কি নেবা বলে ? ফুলন শাড়ী আনবো ? —না শোনো, ওসব না । একরকম আলত উঠেচে আজ মজুমদার বাড়ী দেখে এলাম । কলকেতা থেকে এনেচে মজুমদার মশায়ের ছেলে—শিশিনিতে থাকে । কি একটা নাম বল্লে ভুলে গিইচি । –শিশিনিতে থাকে ? —হঁ্যা গো । সে বড় মজা, কাটির আগায় তুলো দেওয়া, তাতে করে মাখাতে হয়। ভালো কথা, তরল আলতা—তরল আলতা— —কত দাম ? —দশ পয়সা । হ্যাগ, আনবে এক শিশিনি আমার জন্তি ? —দ্যাখবো এখন। গোটা পাচেক টাকা যদি খেয়ে দেয়ে মুনফা রাখতি পারি, তবে এক শিশিনি ঐ যে কি আলতা তোর জন্তি ঠিক এনে দেবে। এইভাবে গ্রামের ব্রাহ্মণপাড়ার সাথে টেক দিয়ে নিস্তারিণী প্রসাধন দ্রব্য ক্রয় করেছে । তাদের পাড়ার মধ্যে সে-ই সর্বপ্রথম তরল আলতা পায়ে দেয়। শূদ্রপাড়ার মধ্যে ও জিনিস একেবারে নতুন—কখনো কেউ দেখেনি। আলতা পরবার সময়ে যে দেখতে সে-ই অবাক হয়ে থাকতো । হাজরী বুড়ী মাছ বেচতে এসেচে একদিন—সে অবাক হয়ে বল্লে—হঁ্যা বড় বেী, ও শিশিনিতে কি ? কি মাখাচ্চ পায়ে ? নিস্তারিণী সুন্দর রাঙা পা দুখানি ছড়িয়ে আলতা পরতে বসেছিল, একগাল হেসে বলে— এ আলতা দিদিমা । এরে বলে তরল আলতা । —ওমা, পাতা আলতাই তো দেখে এসেচি চিরকাল । শিশিনিতে আলতা থাকে, কখনো শুনিনি। কালে কালে কতই দ্যাখলাম। কিন্তু বড় চমৎকার মানিয়েছে তোমার পায়ে বেী —এমনি টুকটুকে রং, যেন জগদ্ধাত্ৰী পিয়তিমের মত দেখাচ্চে—. এ সব ত্রিশ পয়ত্রিশ বছর আগেকার কথা । শীতের সকালবেলা । ওদের বড় ঘরের দাওয়ায় ছেড়া মাছরে ছেড়া কাথা গায়ে নিস্তারিণী শুয়ে আছে। সংসারের সাবেক অবস্থা আর নেই, হরি যুগী বহুদিন মারা গিয়েচে —হরি যুগীর একমাত্র ছেলে সাধনও আজ তিন চার বছর একদিনের জরে হঠাৎ মার। গিয়েচে। সুতরাং নিস্তারিণী এখন স্বামীপুত্রহীন বিধবা । তার শাশুড়ী এখনও বেঁচে আছে, আর আছে এক বিধবা জা, জায়ের এক মেয়ে, এক ছেলে । পয়ত্রিশ বছর আগের সে উচ্ছলযৌবনা স্বনী গ্রাম্য বন্ধটিকে আজ আর রোগগ্ৰস্তু, শীর্ণকায়া, মলিনবসনা প্রৌঢ়ার মধ্যে খুঁজেও পাওয়া যাবে না ! হরি যুগীর মৃত্যুর সঙ্গে তাদের সে গোয়ালভরা গোরু ও গোলাভর ধান অস্তুতি হয়েচে—ম্বরের চালে খড় নেই, তিন চার