পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত వ8న তিনপুরুষ পূর্বে তার পিতামহ রাজকাৰ্য্য উপলক্ষ্যে এসে পাঞ্জাবে বাস করেন, সেই থেকেই র্তারা দেশছাড়া ৷ সন্ধ্যার পরে তার বৈঠকখানায় গিয়ে বসতাম এবং দেওয়ালে টাঙানো পুরানো আমলের বর্ঘ, কুঠার, পতাকা, বল্লম প্রভৃতি রাজপুতের যুদ্ধাস্ত্র সম্বন্ধে নানা ইতিহাস ও আলোচনা শুনতে বড় ভালো লাগতো । রাজপুতানার, বিশেষ করে কোটা রাজ্যের ইতিহাস সম্বন্ধে মি: সিংয়ের জ্ঞান খুবই গভীর। কিন্তু এ-সকল কথা নয়। আমি একটা আশ্চৰ্য্য ঘটনা বলবো । মিঃ বিনায়ক দত্ত সিংয়ের মত সন্ত্রাস্ত ও শিক্ষিত লোকের মুখে না শুনলে আমিও এ কাহিনী হেসে উড়িয়ে দিতাম। একদিন শীতকালে সন্ধ্যার পরে আমি মিঃ সিংয়ের বৈঠকখানায় গিয়ে বসেচি। ভীষণ শীত সেদিন । দু’পেয়ালা গরম চা পানের পর তাওয়ার তামাক টানচি (মিঃ সিং ধূমপানে অভ্যস্ত নন) । হঠাৎ কি মনে করে জানিনে, আমি তাকে বল্লাম—মিঃ সিং, আপনি অপদেবতায় বিশ্বাস করেন ? মি: সিং একটু চিন্তা করে বল্লেন-হ্যা, করি । —দেখেচেন ভূতটুত ? মিঃ সিং গম্ভীর স্বরে বল্পেন—না, এ আমার কথা নয় । আমার ছোট ঠাকুরদাদার জীবনের ঘটনা । যদি এ ঘটনা না ঘটতো আমাদের বংশে, তবে আজও আমরা কোট। রাজ্যে মস্ত বড় খানদানি তালুকদার হয়ে থাকতে পারতাম। লাহোরে এসে চাকরি করতে হ’ত না । সে বড় আশ্চৰ্য্য ঘটনা । আমি বল্লাম—কি রকম ? —শুমুন তবে । আমার ছোট ঠাকুরদা আমার পিতামহের আপন ভাই নন, বৈমাত্র ভাই । তিনি মস্ত বড় সৌধীন মানুষ ছিলেন– আর ছিলেন খুব স্বপুরুষ । আমি বিনায়ক দত্ত সিংয়ের দীর্ঘ, গৌরবর্ণ, বলিষ্ঠ দেহের দিকে চেয়ে সে কথা অবিশ্বাস করতে পারলাম না । তারপর তিনি বলে যেতে লাগলেন— আমি যখন র্তাকে দেখেচি, তখন আমার বয়স খুব কম। কিন্তু তিনি তখন বদ্ধ উন্মাদ !—এক দম । কেন তিনি উন্মাদ হ’লেন, সেই ইতিহাসের মূলেই এই গল্প। তিনি উন্মাদ হওয়াতে কোট রাজদরবারের আইন অনুসারে তার ভাগের সমস্ত সম্পত্তি আমাদের হাতছাড়া—সে কথা যাকৃ গে । আসল গল্পটা বলি– বিনায়ক দত্ত সিং তার অনবদ্য উর্দুতে সমস্ত গল্পটা বলে গেলেন। মধ্যে মধ্যে আমি তাকে নানা প্রশ্ন করেছিলুম, সে সব বাদ দিয়ে শুধু গল্পটাই আমার নিজের ভাষায় প্রকাশ করলাম । আমাদের গ্রাম থেকে কিছুদূরে কোটা দরবারের একটা সৈন্যদের আড্ডা ছিল । আমার ঠাকুরদাদা সেই সৈন্তদের আড্ডায় মাঝেমাঝে যেতেন—মদ খেয়েস্কৃত্তিকরতে। তার দু’একজন বন্ধুসেখানেছিল,তাদের সঙ্গের নেশাতেই সেখানে যাওয়া! একবার জ্যোংস্কারাত্রে তিনি আৰু তার দুই বন্ধু খেয়ালের মাথায় বরী নদীতে স্নান করতে যাবেন বলে ষোড়ায় করে বেরুলেন ।