পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

كا আরওঁ এক মাস কেটে গেল । গ্রীষ্মকাল এসে পড়েচে । বৃদ্ধ স্ত্রীলোকের মাথায় করে বীকে বীকে খরমুজ বিক্ৰী করতে আনচে বাজারে। এই একমাস কি কষ্টে যাপন করচে হেলিওডোরাস সে-ই জানে। কাউকে বলতে পারেনি যে তার সঙ্গে রাজকন্যা মালবিকার দেখা হয়েছিল, কে কি মনে করবে, কার কানে কি কথা উঠবে । এ-সব হিন্দুরাজ্যের আইনকান্তন বড় কড়া–কথায় কথায় প্রাণদণ্ড। মৃত্যুকে সে ভয় করে না-কিন্তু নিৰ্ব্বোধের মত মৃত্যুকে ডেকে আনার দরকার কি ?--সেইদিনটি থেকে তার শয়নে স্বপনে রাজকন্যা মালবিকা । কতবার সেই উষ্ঠানের আশেপাশে বেড়িয়েচে.দুদিন প্রাণ তুচ্ছ করে ঢুকেও ছিল, সেই পাষাণবেদীতে গিয়ে বসেছিল, কিন্তু সে উদ্যান যেমন সেদিনটির পূৰ্ব্বে ছিল জনহীন, তেমনি তখনও। অবহেলিত উৎসমুখ, ভগ্ন যক্ষমূৰ্ত্তি, বনজঙ্গলে সমাচ্ছন্ন পুপবাটিকা, লতাগৃহ-শৈবালাচ্ছন্ন পাষাণ-প্রাসাদ...জনশূন্ত অলিন্দ...কিন্তু হেলিওডোরাস আর বঁাচে না...সত্যিকার প্রেম জীবনে এই প্রথম এসেচে তার বসুিজলা নিয়ে । জীবনে আর সব কিছু তুচ্ছ হয়ে গিয়েচে ...আর একটিবার সেই অপরূপ রূপসী তরুণী দেবীর সঙ্গে দেখা হয় না ? সব কিছু দিয়ে দিতে পারে হেলিওডোরাস---একটিবার চোখের দেখা---সব দিক থেকে অসম্ভব •••সে সামান্য রাজদূত, কৰ্ম্মচারী মাত্র—তাতে বিদেশী, বিধৰ্ম্মী-অন্যদিকে প্রবলপ্রতাপ মহারাজ ভাগভত্রের কন্ত্যা সে ••• বৈশাখের শেষের দিকে গ্রীষ্মের দাবদাহ আরও বেড়েচে, হেলিওডোরাস কি মনে করে অপরাহের দিকে সেই উদ্যানবাটিকাতে যদুচ্ছাক্রমে ভ্রমণ করতে করতে গিয়ে হাজির হ’ল। পক আম্রফলের গন্ধ —বৈশাখ-অপরাত্বের উষ্ণ বাতাসে । সেই পাষাণবেদীতে আগেকার আর দু’বারের মত এবারও বসলে । দু’বার নিষ্ফল হয়েচে এই বৃথা প্রতীক্ষা, এবারও হবে সে জানে। তা নয়, সেজন্যে সে আসে নি–কিন্তু এই লতাগৃহের বাতাসে যেন তার দেহগন্ধ মিশিয়ে আছে—পক্ষ আসিমলের গন্ধ যেমন মিশে রয়েচে এই নিদাঘ-অপরাত্বের বাতাসে । সে স্বপ্ন দেখতে চায়— ভাবতে চায়—কোথায় কোন স্বর্থী প্রেমিক যুগল এমনি জনহীন নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় পরস্পরের হাত ধরে যুীবনে বিচরণশীল—কত কথা, কত প্রণয়-গুঞ্জন, কত চুম্বন উভয়ের মধ্যে,—সে আর রাজকন্যা মালবিকা •••এমন যদি কোনদিন— 蠱 ভাবতে ভাবতে বোধ হয় তার তন্দ্ৰাকর্ষণ হয়ে থাকবে । গরম তো বটেই••• হঠাৎ যেন একটি স্বন্দর হাস্যমুখ কিশোরমূৰ্ত্তি তার সামনে এসে দাড়িয়ে তাকে এক ঠেলা দিয়ে জাগিয়ে তুলে বল্লে—আমি কতকাল অপেক্ষা করবো তোমার জন্যে ? ওঠে, ওঠো— কত এলোমেলো স্বপ্ন থাকে মাথায় । হেলিওডোরাস জেগে উঠলো। বেদীর গায়ে তার খড়গথানা ঠেকানো রয়েচে, হাতে নিয়ে বাগানের বাইরে তার রথের কাছে এল । সত্যিই সে উচ্চত্রাস্ত, এমন অবস্থায় সে বেশিদিন এখানে কাটাতে পারবে না। পাগল হয়ে যাবে নাকি শেষে ?