পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९>8 বিভূতি-রচনাবলী ক্রমে আরও আধঘণ্ট কেটে গেল । বেলা বেশ পড়ে এসেচে । এমন সময় গাড়োয়নি বললে—এই যে বাবু বাড়ীর সামনে এসে গিয়েছে গাড়ী। নামুন মা-ঠাকরুন এবার । দুরু দুরু বক্ষে খামলী নামলে সকলের আগে ৷ যদুবাৰু বললেন—না দেখে বাড়ী কেনী । এতগুলো টাকা–বলতে গেলে সৰ্ব্বস্ব খুইয়ে—এই দূর গায়ে বাড়ী কেনা। তুমি আগে নেমে বাড়ীতে ঢোকে । মেয়ের ঘরের লক্ষ্মী কিন, তুমি আগে ঢোকো। আমার তো সাহস হচ্চে না, কি জানি কি রকম হবে । নামে আগে । —হ্যাগো বাড়ী কি পরিষ্কার করা আছে, না একগলা ধুলো আর মাকড়সার জাল আর চামচিকের বাসা। গিয়ে এখন বাট দিতে হবে? চাবি কোথা ? গাড়োয়ান শুনতে পেয়ে বললে—ম ঠাকরুন, বাড়ীতেই আছে মুক্তোর মা গয়লানী আর তার ছেলে । তারাই বাড়ী দেখাশুনো করে, নিচের একটা ঘরে আছে। চাবি তো নেই, বাড়ী খোলাই পড়ে আছে । কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে একটা বঁাশঝাড়ের আড়ালে একেবারে খামলীর সামনেই যে বাড়ীট পড়লো, সেটা দেখে সে আনন্দে ও বিস্ময়ে অবাক হয়ে দাড়িয়ে গেল। এই বাড়ী তাদের ! এমন বাড়ী এই অজ পাড়াগায়ে ! কলকাতায় এমনি হলদে রঙ-করা সবুজ রঙের জানালা খড়খড়িওয়ালা দোতলা বাড়ী দেখেচে —দোতলাও নয়, বাড়ীটা তেতলা—কিন্তু এমন বাড়ীট সত্যিই তাদের নিজস্ব ! শু্যামলী আনন্দে চেচিয়ে উঠে বললে—ওগো স্থাখে, এসে দ্যাথো— পরক্ষণেই ওর লজ্জা হোল। গাড়োয়ানটা না জানি কি আদেখলেই মনে করলে ওকে। ততক্ষণে যদুবাবু ও ছেলেমেয়েরা বঁাশঝাড়ের মোড় ছাডিয়ে বাড়ীর কাছে এসে গিয়েচে । যদুবাবু বললেন—বা, বেশ-বেশ– রাস্তায় আসতে গাড়োয়ানকে যদুবাবু বাড়ীর কথা বহুবার জিজ্ঞেস করেছিলেন। সে বলেছিল-চমৎকার বাড়ী বাৰু। কলকাতার বাবুর থাকবার জন্তি করেলেন । তেতলা বাড়ী, দরাজ জায়গা, নদীর ধারে বাধাঘাট আছে, ফল পাকড়ের গাছ। দ্যাখবেন বাড়ীর মত বাড়ী ! কিন্তু ছোটলোকের সে কথায় আস্থা স্থাপন করতে পারে নি শু্যামলী বা তার স্বামী । এখন বাড়ীটা দেখে মনে হোল গাড়োয়ান অনেক কমিয়ে বলেছিল। বাড়ীটা সম্বন্ধে আসল কথা হচ্চে অনেকখানি ফাক জায়গার মধ্যে বাড়ীটা দাড়িয়ে, অথচ ঠিক পাশেই গ্রামের বসতি । & বনানীয় ও মাঠের সবুজের মধ্যে হলদে রঙের বাহার। ওরা ছড়মূড় করে সবাই গিয়ে বাড়ী ঢুকলো। নিচের ঘরে গিয়ে দেখলে সেখানে এক বুড়ি মাছরের ওপর ঘূমিয়ে আছে। খামলী ডাকলে—ও ঝি—কি যেন নাম ওয়—মুক্তোর মা ? ও মুক্তোর মা— বুড়ি ধড়মড় করে জেগে উঠে বললো। তারপর ধূমজড়ানো চোখে ওদের দিকে খুব