পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসাধারণ @১৯ হেডমাস্টার ও ইনস্পেক্টর হো হো করে হেসে উঠলেন । এর মধ্যে হসবার ব্যাপার কি আছে, হারুণ তা খুঁজেই পেলে না। বিপিন মাস্টারের দিকে হঠাৎ ওর নজর পড়তেই দেখলে তিনি রোধক্যায়িত নেত্রে ওর দিকে চেয়ে আছেন—ওকে গিলে খাবেন এই ভাব । হারুণ তেৰে পেলে না কি এমন অস্কায় কাজ সে করে বোসলো । বিপিন মাস্টার নিশ্চয়ই চটেছে, ওঁর মুখে তার রেশ আছে। ইনপেক্টর ওর দিকে চেয়ে বললেন—বেশ মজার ছেলেটি, সে সিম্পল । হেডমাস্টার বললেন—পাড়াগায়ে বাড়ী, কিছুই জানে না। —চলুন, অন্য ক্লাসে যাওয়া যাক । ঘণ্টাখানেক পরে হেডমাস্টার এসে ওদের ক্লাসে বললেন—পুণ্যশ্লোক নৃপতি হারুণ-অলরসিদ্ধের নামে তোমার নাম । তার কথা কিছু জানো ? তিনি ছিলেন গরীবের মা-বাপ, ছদ্মবেশে প্রজাদের দুঃখ দেখে বেড়াতেম । শিখে রেখো । বিপিন মাস্টার ছুটির আগে ওদের ক্লাসে এসে বেত আস্ফালন করে বললেন—সরে এসো এদিকে, মুখুরি ধাড়ি। ক্লাসের মুখ হালিয়েচ আজ । বেত লাগাই এসো। হারুণ কাদো কাদে মুখে এগিয়ে যেতেই হেডমাস্টারের ঘর থেকে স্কুলের চাকর এসে বললে—হারুণকে ইনস্পেক্টরবাৰু ডাকচেন । কি বিপদেই আজ পড়েচে ও । কার মুখ দেখে না জানি আজ সে উঠেছিল। অফিসঘরে ওকে ইনস্পেক্টরবাবু জিজ্ঞেস করলেন-বাড়ী আপাতত কোথায় ? হারুণ ভরে ভয়ে বললে—জানিপুর । —কতদূর এখান থেকে ? —দু মাইল, স্তার। —কি খেয়ে এসেচে ? —পান্ত ভাত । —মসরুর কোথায় ? -श्रांप्छ ? —খোজা মসরুর ? না, কি বিপদেই আজ ভগবান তাকে ফেললেন । এ সব কথা সে জীবনে কখনো শোনে নি। কেন এত বড় বড় লোক খাপছাড়া কথা বলে, যার কোনো মানে হয় না? উত্তর দিতে না পারলে এখুনি বিপনে মাস্টার বেত উচিয়ে আসবে মারতে । হারুণের মুখ শুকিয়ে গেল। ও করুণ নয়নে একবার ইনপেক্টরবাবুর দিকে চেয়ে দেখে চোখমুখ নিচু করলে। একবার এদিক-ওদিক চেয়ে দেখলে বিপনে মাস্টারটা ওম্বরে কোথাও আছে নাকি। সকালের এচিড় পাড়া আজ একেবারে মাঠে মারা গেল। অদৃষ্ট আর কাকে বলে ? লাম রেখেচেন তার বাপ-মা, তার কি দোষ ?