পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

అు বিভূতি-রচনাবলী কলকাতা থেকে ফিরেচি কাল বৈকালে । ইউনিভারসিটি মিটিংএ সেখানে অনেকদিন পরে সুনীতিবাবু ও বহু পুরোনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা । মায়াদি ও বেলুকে নিয়ে রাত ৯টার সময়ে বাণী রায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে কলকাতার অন্ধকার ভরা রূপের সঙ্গে অত্যন্ত প্রত্যক্ষ পরিচয় হয়েছিল। গ্রামে ফিরলুম রবিবার বৈকালে, বেশ একটু মেঘবৃষ্টি দেখা দিলে, সামান্য একটু কালবৈশাখী বৈশাখের বিকেলে । তারপরেই আকাশে দেখা দিলে রাঙা মেঘস্তৃপ, আমি বেড়াতে গেলুম নদীর ধারের মাঠে, গাছপালার কি চমৎকার সৌন্দৰ্য্য। মুগ্ধ করে দেয় আমাকে, চেয়ে দেখে সত্যিই বিস্ময় লাগে । কত কি গাছ, কত ধরনের পাতা । বিশ্বরূপের কত কি রূপ ! যেদিকে চোখ পড়ে অবাক চোখে চেয়ে থাকি। বরোজপোতার বঁাশের বনে কচু ঝাড়, বেত গাছের মত পাতা কি একটা গাছ, তারই পাশে বাশের ডগা নত হয়ে আছে—নিভৃত নিরাল বনভূমি, কোথায় সেই নাকটিটাড়ের শালবন করন্ধ পুপ-স্ববাসিত অপরাহের বাতাস, মাঠাবুরু পাহাড়ের শিখরাজি। বিবাট হস্তীমূণ্ডের মত পরিদৃগুমান কাড়াবুরুর শিখর—আর কোথায় বাংলার শু্যাম সৌন্দৰ্য্য। নদীজলে বিকেলে নাইতে নেমে ইছামতীর কালো জলে দেখি ভগবানের আর একটি রূপস্থষ্টি । o যিনি অগ্নিতে যিনি জলেতে যিনি শোভন এ ক্ষিতিতলেতে উপনিষদের ঋষিরা শুধু দার্শনিক ছিলেন না, দ্রষ্টা ছিলেন, কবি ছিলেন। পরশু এলুম উত্তরপাড়া রাজবাড়ীতে রবীন্দ্র জন্মোৎসব সম্পন্ন করে। মাস্টার মশায় অতুল গুপ্ত, সজনী, বুদ্ধদেব, বাণী রায় সবাই একসঙ্গে যাওয়া গেল । বেশ মজা করে মিটিং করা গেল —ভাটপাড়ার আশালতার সঙ্গে দেখা হল অনেকদিন পরে—প্রায় আঠারো বছর পরে। ঘটে গেল জিনিসটা আমার সেই গল্পটির মত । একটি ছোট ছেলে এসে বল্লে, “আপনাকে আমার মা ডাকচেন ।” গেলুম একটা পুরোনো দোতলা বাড়ী—রাজা জ্যোৎস্নাকুমার মুখোপাধ্যায়ের প্রাসাদের সামনে । একটি মেয়ে এসে ঝুপ করে নীচু হযে পায়ের জুতোর উপর দুহাত বুলিয়ে বল্লে—“দাদা, কেমন আছেন ? কি ভাগ্যি যে আপনি এলেন এখানে ৷” —“s, আশা না, f" —“হ্যা দাদা। এখন বড়-মানুষ হয়ে গিয়েচেন—আপনি কি এখন গরীব বোনকে চিনতে পারবেন ?” ঠিক একটি ছোট গল্প। কিছুদিন জাগেই এ গল্প আমি লিখেচি কি একটা কাগজে । পরদিন ফিরুলুম বনগায়ে । স্টেশনে নেমে—অম্বরপুরের একখানা গরুর গাড়ী যাচ্ছে, তাতেই চড়ে বললুম—প্রথম শেওড়া গাছ ভাট গাছ দেখে কি আমার আনন্দ ! এবার বিভূতিদের বাড়ী গিয়ে উঠেছিলাম।