পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

84 в - বিভূতি-রচনাবলী যেন নিজের আনন্দে নিজে মত্ত হয়ে বড় বড় ঢেউ তুলে কূলে আছড়ে আছড়ে পড়চে । দীর্ঘ টানা ঢেউয়ের রাশি মাথায় সাদা ফেনার পুঞ্জ নিয়ে বহুদূৰ্বব্যাপী একটি রেখার স্বষ্টি করেচে। দুপুর বেলায় কতক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে সমুদ্রের সেই রূপ দর্শন করলুম ! স্বমখবাৰু এসে বল্পে, চলুন চা খেয়ে আসি আর সস্তায় জুতো নিয়ে আসি মুচিপাড়া থেকে । ওর সঙ্গে বেরিয়ে হঠাৎ আবার সমুদ্রের সঙ্গে দেখা । আর আমি যেতে পারলুম না কোথাও । অবাক হয়ে চেয়ে বসে পড়লাম। কি বিরাটত্বের আভাস ওই দূরবিসপী নীল রূপের মধ্যে, উৰ্ম্মিমালার সফেন আকুলতায়, তটরেখার বিলীয়মান খামলিমায়। স্থলভূমির শেষ হয়ে গেল এখানে, দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এই নীলাম্ব রাশির ওপার নেই, আবার এপায়ে এই এসিয়া মহাদেশের উত্তর প্রাস্ত, ইনিসে ও লেনা নদীর মুখ । অবিপ্তি দক্ষিণ মেরু মহাদেশের তুধারাবৃত নিজৰ্ণ ভূভাগের কথা তুলচি নে এখানে। হুলিয়ারা সেই বিক্ষুব্ধ বাঁচিমলা পার হয়ে ডিঙিতে মাছ ধরে আনচে—একটা ৪word fish দেখলুম আনচে—প্রকাণ্ড করাতখানা ঝক ঝক করচে । মুচিপাড়ার জুতো দেখতে গিয়ে একটা দোকানে বসে সবাই গল্প করচি। একটি পথ-চলতি লোক এসে স্থা করে মুখের দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ দেখি সে গালুডির সেই হরিপদ ডাক্তার। অনেকদিন পরে দেখে খুব খুশি হই। বল্লে—বেড়িয়ে বেড়িয়েই জীবনটাকে নষ্ট করলুম বিভূতিবাবু। সন্ধ্যাবেলা আমার এখানে আডডা বসলো—অনেকগুলি ভদ্রলোক এলেন আডিডা দিতে—যছু মল্লিকের পৌত্র বৃন্দাবন মল্লিক প্রভৃতি। জ্যোৎস্নারাত্রে আবার সমুদ্রের ধারে গিয়ে কতক্ষণ গল্প গুজব করি । সন্ধ্যায় আজ বীরেন রায়, বৃন্দাবন মল্লিক, গজেনবাবু, মুমথ ঘোষ প্রভৃতির সঙ্গে চক্রতীর্থে সমুদ্রতীরে বালির ওপর গিয়ে কতক্ষণ বসে ছিলাম। দ্বাদশীর জ্যোৎস্ব সমুদ্রের উপর পড়ে তার তরঙ্গরাজির রূপ বদলে দিয়েচে, ধুধু নিজন বালুচরের গায়ে আছড়ে এসে পড়চে উৰ্ম্মিমালা— চৈতন্যদেব চক্রতীর্থে সমুদ্রের এই রূপ দেখেই নাকি সমূত্রে বাপ দিয়ে পড়েন—আজি ৪৫০ বছর জাগের কথা। সেই সমুদ্র এখনও ঠিক তেমনি আছে, সেই তরঙ্গ-ভঙ্গ, সেই নিজন বালুতট, সেই ঝাউবনশ্রেণী, সেই উদাস অস্পষ্ট চক্রবালরেখা । ধীরেন রায় আজ সকালে প্রাচীন তোলালি নগরের অনেক পুরোনো পুথি, পোড়ামাটির খেলনা, পাথরের মালা ইত্যাদি দেখালেন। উড়িষ্কার প্রাচীন শিলা সংগ্রহ ইনি করে এলেচেন চিরকাল ধরে। কত টাকা নষ্ট করেচেন এদের পেছনে অথচ ক্লিভল্যাও মিউজিয়ম থেকে যখন শি হাজার টাকা দিয়ে ওঁর সংগৃহীত জিনিসগুলি কিনতে চাইলে, তখন উনি তাদের না দিয়ে নমাত হাজার টাকা নিয়ে আশুতোষ মিউজিয়মে দান করলেন। আজ গালুডির সেই হরিপদবাৰু ভোরে আমার এখানে এসেছিলেন। সবই মিলে খুব আড্ডা দিয়ে চা খাওয়া গেল 'অাদর্শ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার'-এ—তারপর ওরা