পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৫০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

83२ বিভূতি-রচনাবলী বনানী ও পাহাড়পৰ্ব্বতের দপ্ত, মুক্ত space-এর দৃশ্ব র্যার ভালো লাগে না–তার সঙ্গে কি তা বলে ঝগড়া করতে হবে ? তার হয়তে যা ভালো লাগে, আমার তা ভালো লাগে না, স্বতরাং তিনিও তো আমার সঙ্গে ঝগড করতে পারেন তা নিয়ে । মনোহরপুর নামলাম বেলা দশটার সময় । একটা কুলীকে জিজ্ঞেস করলাম—ডাকবাংলো কোথায় ? —পাহাডের ওপরে। কিন্তু সে ডাকবাংলো নয়, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বাংলো । —সে আমি জানি, তুমি পথ দেখিয়ে দিতে পারো ? —সোজা পশ্চিম দিকে চলে যান । পাহাডের ওপরে উঠতে গিয়ে ডানদিকে দেখি বনবিভাগের আপিস । ভাবলাম চিডিয়া পাহাডে যাবার একমাত্র উপায় হলো রেল । সে রেলে চডতে হলে খনিওয়ালাদের অনুমতি দরকার। বনবিভাগের কৰ্ম্মচারীরা সে বিষয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারবেন ভেবে আমি আপিসের দিকেই গেলাম। তা ছাড বনবিভাগের অনুমতি ব্যতীত তো পাহাডের ওপরের বাংলোতেও থাকা যাবে না। আপিসে জিজ্ঞেস করে জানা গেল শ্ৰীযুক্ত রাসবিহারী গুপ্ত বর্তমানে এখানের ভারপ্রাপ কৰ্ম্মচারী। রাসবিহারীবাবুকে আমি জানতাম খুবই, ১৯৪৩ সালে সারেও বন পরিভ্রমণের সময়ে তিনি আমার সঙ্গী ছিলেন । বল্লাম—রাসবিহারীবাবু আছেন ? একজন আরদালী বল্পে—না বাবুজী । তিনি বনের কোনো কাজে বেরিয়ে গিয়েচেন । —কখন আসবেন ? —ঠিক নেই। দেরি হবে। আমি তাদের একজনকে সঙ্গে নিয়ে চিডিয়া লাইট রেলের সাইডিংএ যাবো ভাবচি এমন সময়ে রাসবিহারীবাবুর বাসা থেকে একজন চাকর এসে বল্লে—আপনাকে মাইজী নিয়ে যেতে বলেচেন বাসাতে— —কোন মাইজী ? —রাসবিহারীবাবুর স্ত্রী। বাসাতে গিয়ে ভদ্রমহিলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনিও আমাকে জানতেন । চা ও জলখাবারের ব্যবস্থা করলেন । আমি এখুনি চিডিয়া রেলে যেতে উষ্ঠত হয়েছি শুনে বল্পেন— এখন কেন যাবেন ? সে ট্রেন ছাড়বার সময় হয়েছে। এখান থেকে সাইডিং একমাইল দূরে । গিয়ে গাড়ী পাবেন না । তার চেয়ে ধীরেস্থস্থে স্নান করে নিয়ে বিশ্রাম করুন । কথা শুনলাম না । আমার বন-ভ্রমণের তৃষ্ণ তখন অত্যস্ত বলবতী ৷ মাইল খানেক ছুটতে ছুটতে গিয়ে আমরাও যেই পাইডিংএ পোঁচেছি ট্রেনও ছেড়ে দিলে। বাধ্য হয়ে ফিরলাম। এসে দেখি রাসবিহারীবাবু কাজ থেকে ফিরেছেন। আমাকে দেখে খুব খুশি । দুজনে গল্প করতে করতে স্নান করে এলাম নদীতে । ওঁদের অতিথিপরায়ণতার কথা অনেক দিন মনে থাকবে।