ছেলেবেলা

উইকিসংকলন থেকে
ছেলেবেলা

ছেলেবেলা

ছেলেবেলা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিশ্বভারতী

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষাপর্ষৎ -কর্তৃক সপ্তম শ্রেণীর বাংলা অতিরিক্ত সহায়ক পাঠ্যগ্রন্থ-রূপে

অনুমােদিত। বিজ্ঞপ্তি সংখ্যা টি. বি. ৭৬/৭/এস. আর. বি. ১১৯

প্রকাশ ভাদ্র ১৩৪৭

পুনর্মুদ্রণ ভাদ্র ১৩৪৮, জ্যৈষ্ঠ ১৩৫০, শ্রাবণ ১৩৫১, আষাঢ় ১৩৫২, পৌষ ১৩৫৩

ফাল্গুন ১৩৫৩, চৈত্র ১৩৫৪, ফাল্গুন ১৩৫৫, মাঘ ১৩৬৩, পৌষ ১৩৬৬

অগ্রহায়ণ ১৩৬৮, ভাদ্র ১৩৭১, পৌষ ১৩৭৫, মাঘ ১৩৭৯, মাঘ ১৩৮১

ফাল্গুন ১৩৮৩, বৈশাখ ১৩৮৬, ফাল্গুন ১৩৯১, পৌষ ১৩৯৪

জ্যৈষ্ঠ ১৩৯৭, জ্যৈষ্ঠ ১৪০০, পৌষ ১৪০১, অগ্রহায়ণ ১৪০৫

ভাদ্র ১৪০৮, জ্যৈষ্ঠ ১৪১০, জ্যৈষ্ঠ ১৪১৩

চৈত্র ১৪১৬, জ্যৈষ্ঠ ১৪২১

চৈত্র ১৪২৪

© বিশ্বভারতী

মূল্য : ৭০.০০ টাকা

প্রকাশক সবুজকলি সেন

বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ। ৬ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রােড। কলকাতা ১৭

মুদ্রক ডি জি অফসেট

৯৬/এন মহারানি ইন্দিরা দেবী রােড। কলকাতা ৬০

ভূমিকা

গোঁসাইজির কাছ থেকে অনুরোধ এল, ছেলেদের জন্যে কিছু লিখি। ভাবলুম, ছেলেমানুষ রবীন্দ্রনাথের কথা লেখা যাক। চেষ্টা করলুম সেই অতীতের প্রেতলোকে প্রবেশ করতে। এখনকার সঙ্গে তার অন্তর-বাহিরের মাপ মেলে না। তখনকার প্রদীপে যত ছিল আলো তার চেয়ে ধোঁয়া ছিল বেশি। বুদ্ধির এলাকায় তখন বৈজ্ঞানিক সার্ভে আরম্ভ হয় নি, সম্ভব-অসম্ভবের সীমা-সরহদ্দের চিহ্ন ছিল পরস্পর জড়ানো। সেই সময়টুকুর বিবরণ যে ভাষায় গেঁথেছি সে স্বভাবতই হয়েছে সহজ, যথাসম্ভব ছেলেদেরই ভাবনার উপযুক্ত। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমানুষি কল্পনাজাল মন থেকে কুয়াশার মতো যখন কেটে যেতে লাগল তখনকার কালের বর্ণনার ভাষা বদল করি নি, কিন্তু ভাবটা আপনিই শৈশবকে ছাড়িয়ে গেছে। এই বিবরণটিকে ছেলেবেলাকার সীমা অতিক্রম করতে দেওয়া হয় নি— কিন্তু শেষকালে এই স্মৃতি কিশোরবয়সের মুখোমুখি এসে পৌঁছিয়েছে। সেইখানে একবার স্থির হয়ে দাঁড়ালে বোঝা যাবে, কেমন ক’রে বালকের মনঃপ্রকৃতি বিচিত্র পারিপার্শ্বিকের আকস্মিক এবং অপরিহার্য সমবায়ে ক্রমশ পরিণত হয়ে উঠেছে। সমস্ত বিবরণটাকেই ‘ছেলেবেলা’ আখ্যা দেওয়ার বিশেষ সার্থকতা এই যে, ছেলেমানুষের বৃদ্ধি তার প্রাণশক্তির বৃদ্ধি। জীবনের আদিপর্বে প্রধানত সেইটেরই গতি অনুসরণযোগ্য। যে পোষণপদার্থ তার প্রাণের সঙ্গে আপনি মেলে বালক তাই চারি দিক থেকে সহজে আত্মসাৎ করে চলে এসেছে। প্রচলিত শিক্ষাপ্রণালীদ্বারা তাকে মানুষ করবার চেষ্টাকে সে মেনে নিয়েছে অতি সামান্য পরিমাণেই।

 এই বইটির বিষয়বস্তুর কিছু কিছু অংশ পাওয়া যাবে জীবনস্মৃতিতে, কিন্তু তার স্বাদ আলাদা— সরোবরের সঙ্গে ঝরনার তফাতের মতো। সে হল কাহিনী, এ হল কাকলি; সেটা দেখা দিচ্ছে ঝুড়িতে, এটা দেখা দিচ্ছে গাছে— ফলের সঙ্গে চার দিকের ডালপালাকে মিলিয়ে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। কিছুকাল হল, একটা কবিতার বইয়ে এর কিছু কিছু চেহারা দেখা দিয়েছিল, সেটা পদ্যের ফিল্‌মে। বইটার নাম ‘ছড়ার ছবি’। তাতে বকুনি ছিল কিছু নাবালকের, কিছু সাবালকের। তাতে খুশির প্রকাশ ছিল অনেকটাই ছেলেমানুষি খেয়ালের। এ বইটাতে বালভাষিত গদ্যে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বালক

বয়স তখন ছিল কাঁচা— হাল্কা দেহখানা
ছিল পাখির মতাে, শুধু ছিল না তার ডানা।
উড়ত পাশের ছাদের থেকে পায়রাগুলাের ঝাঁক,
বারান্দাটার রেলিঙ-’পরে ডাকত এসে কাক।
ফেরিওয়ালা হেঁকে যেত গলির ও পার থেকে
তপসি মাছের ঝুড়িখানা গামছা দিয়ে ঢেকে।
বেহালাটা হেলিয়ে কাঁধে ছাদের ’পরে দাদা,
সন্ধ্যাতারার সুরে যেন সুর হ’ত তাঁর সাধা।
জুটেছি বউদিদির কাছে ইংরেজি-পাঠ ছেড়ে,
মুখখানিতে ঘের-দেওয়া তাঁর শাড়িটি লাল-পেড়ে।
চুরি করে চাবির গােছা লুকিয়ে ফুলের টবে
স্নেহের রাগে রাগিয়ে দিতেম নানান উপদ্রবে।
কিশােরী চাটুজ্জে হঠাৎ জুটত সন্ধ্যা হলে—
বাঁ হাতে তার থেলাে হুঁকো, চাদর কাঁধে ঝােলে।
দ্রুত লয়ে আউড়ে যেত লবকুশের ছড়া—
থাক্‌ত আমার খাতা লেখা, প’ড়ে থাকত পড়া;
মনে মনে ইচ্ছা হ’ত, যদি কোনাে ছলে
ভর্‌তি হওয়া সহজ হ’ত এই পাঁচালির দলে,
ভাব্‌না মাথায় চাপত নাকো ক্লাসে ওঠার দায়ে,
গান শুনিয়ে চলে যেতুম নতুন নতুন গাঁয়ে।

স্কুলের ছুটি হয়ে গেলে বাড়ির কাছে এসে
হঠাৎ দেখি, মেঘ নেমেছে ছাদের কাছে ঘেঁষে।
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে, রাস্তা ভাসে জলে—
ঐরাবতের শুঁড় দেখা দেয় জল-ঢালা সব নলে।
অন্ধকারে শােনা যেত রিম্‌ঝিমিনি ধারা,
রাজপুত্র তেপান্তরে কোথা সে পথ-হারা।
ম্যাপে যে-সব পাহাড় জানি, জানি যে-সব গাঙ,
কুয়েন্‌লুন আর মিসিসিপি ইয়াংসিকিয়াঙ—
জানার সঙ্গে আধেক জানা, দূরের থেকে শােনা,
নানা রঙের নানা সুতােয় সব দিয়ে জাল-বােনা,
নানারকম ধ্বনির সঙ্গে নানান চলাফেরা,
সব দিয়ে এক হাল্কা জগৎ মন দিয়ে মাের ঘেরা,
ভাব্‌নাগুলাে তারই মধ্যে ফিরত থাকি থাকি—
বানের জলে শ্যাওলা যেমন, মেঘের তলে পাখি।

শান্তিনিকেতন

আষাঢ় ১৩৪৪

ছেলেবেলা

পরিচ্ছেদসমূহ (মূল গ্রন্থে নেই)

সূচীপত্র

 
 

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।