পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বিভূতি-রচনাবলী আয়োজন খুব বড় বটে কিন্তু পরিবেশন করবার ও দেখাশুনো করবার লোকের অভাবে সাধারণ নিমন্ত্রিতদের অদৃষ্টে বিশেষ কিছু জুটচে না। • আহারাদি শেষ হয়ে গেল । এখুনি পুকুরের ধারে বাজি পোড়ানো হবে, কলকাতা থেকে বরপক্ষ ভাল বাজ এনেচে এসব পাড়াগায়ে অমন কেউ দেখেনি। বাজি দেখবার জন্যে পুকুরের ধারে লোকে লোকারণ্য হয়েচে । যতীনও তাদের মধ্যে গিয়ে দাড়ালো । কুস শব্দে একটা হাউই আকাশে উঠে গিয়ে প্রায় নক্ষত্রের গায়ে ঠেকে ঠেকে তারপর লাল নীল সবুজ ফুল কেটে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামতে লাগল। দলের অনেকে চীৎকার করে উঠলে, আগুন লাগবে। আগুন লাগবে । দু-চারবার এ রকম তারাবাজি উঠলো নামলো, কারো ঘরের চালে আগুন লাগলো না দেখে উদ্বিগ্ন লোকদের মন শাস্ত হোল । তারাবাজি একটার গায়ে একটা হুলু করে আকাশে উঠছিল, আর যতীন আশ্চর্য হয়ে সে দিকে দেয়ে দেখছিল একদুষ্টে উধ্বমুখে । বহুদিন ধরে সে পাড়াগায়ে নিতান্ত দুরবস্থায় পড়ে আছে, অনেকদিন ভাল কিছু দেখে নি । কলকাতার সে ছাত্রজীবন এখন আর মনে পড়ে না যেন—সে সব যেন গত জন্মের কাহিনী । স্বতোরগাছির মেঘনাথ চকত্তি ওকে দেখে বল্পে—এই যে যতীন। আজ রায়সাহেবের বাড়ী খেলে নাকি ? তোমার নেমস্তন্ন ছিল ; তা তোমাদের বলতে সাহস করে—কই আমাদের বলুক দিকি ? ছোট জাত তিলি-তামাল, না হয় দুটো টাকাই হয়েচে, তা বলে ব্রাহ্মণদের নেমস্তন্ন করে খাওয়াবে বাড়ীতে !---তোমরা গিয়ে গিয়ে নিজেদের মান খুইয়েচ তাই তোমাদের বলতে সাহস করে---ছিঃ– যতীন যখন বাডী পৌছলো তখন রাত্রি দ্বিপ্রহর । বাশবনের মধ্যে মুড়ি পথ পেরিয়ে ওর পৈতৃক আমলের কোঠা । অনেকগুলো ঘরঘোর, বাইরে চণ্ডীমণ্ডপ, তবে এখন সবই শ্রীহীন । একটা ধানের বড় গোলা ছিল, অর্থকষ্ট্রে পড়ে গত মাঘমাসে সে সাড়ে সাত টাকায় গোলাটা বিক্ৰী করে ফেলেচে । গোলার ইটে-গাথুনি-সিড়ি ক’খানা মাত্র বর্তমান আছে। . . . আলো জেলে নিজের বিছানাটা পেতে নিয়েই সে আলোটা নিভিয়ে দলে- তেলের পয়সা জোটে কোথা থেকে যে আলো জালিয়ে রাখবে। অন্ধকার শূন্ত বাড়ীতে এক বসলেই মনে পড়ে আশালতার কথা । t 韓 尊 আশালতা কি করে এত নিষ্ঠুর হতে পারলে ? বিয়ের পরে প্রথম পাচ বছরের কথা মনে ‘হোলে তার বুকের মধ্যে কেমন করে ওঠে । এই ধরনের কত শ্রাবণ-রাত্রিতে ঐ ছাদে সে কত নিভৃত আনন্দ-মুহূর্তের কাহিনী এই বাড়ীর বাতাসে আজও বাজে, কত মিষ্টি কথা, কত চাপ হাসি, কত সগ্রেম চাহনি । মনে পড়ে তারা দুজনে একসঙ্গে তারকেশ্বর গিয়েছিল একবার, তখন যতীনের বড় ছেলেটি