পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান >> কেউ সাড়া দিলে না। আরও লোকজন জড় হোল-দোর ভাঙা হোল । যতীন বিছানায় মরে কাঠ হয়ে আছে। কতক্ষণ মরেচে কে জানে, দুঘণ্টাও হতে পারে, দশঘণ্টাও হতে পারে । § তখন সকলে খুব দুঃখ করতে লাগলো। বাস্তবিকই কারো দোষ ছিল না। যতীন লোকট আজকাল কেমন হয়ে গিয়েছিল, লোকজনের সঙ্গে তেমন করে মিশতো না, কথাবার্তা বলতে না বলে লোকেও এদিকে বড় একটা আসতো না । সুতরাং যতীনের আবার অস্থখ হয়েচে, এ খবরও কেউ রাখে না। নবীন বাড়ুৰ্য্যে বল্পেন—আহা, ভবতারণ-দা’র ছেলে । ওর বাবার সঙ্গে একম্বঙ্গে পাশ খেলেচি আমাদের চণ্ডীমণ্ডপে বসে। লোকটা বেঘোরে মারা গেল। তাই-কি আমি জানি ছাই যে এমনি একটা অসুখ হয়েচে ( বাস্তবিকই তিনি জানতেন না ), আমার স্ত্রী আর আমি এসে রাত জাগতাম। আর সে বোঁটিরই বা কি আক্কেল—ছ’বছরের মধ্যে একবার চোখের দেখা দেখলে না গা—হঁ্যা ? সকলে একবাক্যে যতীনের বৌ-এর উদ্দেশে বহু গালাগালি করলে । যতীনের মৃতদেহ যখন শ্মশানে সৎকারের জন্যে নিয়ে যাওয়া হোল, তখন বেলা দুটোর কম न*च । 8 যতীন হঠাৎ দেখতে পেলে তার খাটের পাশে পুষ্প দাড়িয়ে তার দিকে চেয়ে মৃদু মৃদু হাসচে।. পুপ! এক সময় পুষ্পের চেয়ে তার জীবনে প্রিয়তর কে ছিল ? দুজনে— নৈহাটির ঘাটে বসে পৈঠার পাটে কত খেলেচি ফুল ভাসায়ে জলে— সেই পুষ্প । নৈহাটির ঘাট নয়—সাগঞ্জ-কেওটার বুড়োশিবতলার ঘাট । নৈহাটির আরপারে। সেখানে ছেলেবেলায় তার মালীমার জীবদ্দশায় সে কতবার গিয়েচে । এক এক সময় ছ'মাস আটমাস মাসীমার কাছেই সে থাকতো। মাসীমার ছেলেপুলে ছিল না, যতীন ছিল তার চক্ষের মণি। তারপর মাসীম মারা গেলে, মেসোমশায় দ্বিতীয়বার দারপরিগ্রহ করলেন, সাগঞ্জ-কেওটাতে মাস্টীমার বাড়ীর দরজা চিরদিনের মত বন্ধ হয়ে গেল ওর কাছে । বুড়োশিবতলায় পুরোনো মন্দিরের কাছে ছিল ওর মাসীমার বাড়ী আর রাস্তার ওপাশেই ছিল পুপদের বাড়ী । পুষ্পর বাবা খামলাল মুখুয্যে বঁাশবেড়ের বাবুদের জমিদারিতে কি কাজ করতেন । পুষ্প ছিল ভারি মুন্দরী মেয়ে—তার হাপি-লে হাসি কেবল পুপই হাসতে পারতো ।