পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান Uలిసి আমায় একটু বলবেন দয়া করে ? দেবী বল্লেন--বলবো এর পরে। এখন বলি শোনো । আমি থাকি অন্ত নক্ষত্ৰলোকে । পৃথিবীর এক জায়গায়ু মানুষের ভয়ানক কষ্ট । আমি সে দেশে জন্মেছিলুম হাজার হাজাব বছরআগে । তাদের দুঃখে, আর আজ কল্পপৰ্বতের সঙ্গীত শুনে, আমার মন বড় ব্যাকুল হয়েচে । চলে যাই পৃথিবীতে, দেখি কি করা যায়—কিন্তু মুশকিল হয়েচে এই যে আমি এতকাল আগে পৃথিবী থেকে চলে এসেচি, জড় জগতের সঙ্গে সম্পর্ক এতকাল হারিয়েচি যে সরাসরি ভাবে কোনো কাজই সে জগতে করতে পারি নে। মধ্যবর্তী স্তরের আত্মার সাহায্য ভিন্ন আমি পৃথিবীতে গিয়ে কি করবো ? তোমরা যদি যাও— ওরা বলে উঠলো, নিশ্চয়ই যাবো মা ! দেবী বলেন—একটু অপেক্ষ কর । আমার এক সঙ্গা আছেন—তিনি আমার লোকেহ থাকেন, উচ্চ স্তরের জীব, পৃথিবীতে গিয়ে শুধু আকুপাকু করেন, কিছু করতে পারেন না কাজে । পৃথিবীর জড়স্তরে আমরা সংস্পর্শ স্থাপন করতে পারি নে। তিনি প্রাচীন যুগের একজন বড় কবি ছিলেন । তাকে নিয়ে যাই চলো । এসো আমার সঙ্গে । আবার নীল শূন্যে যাত্রা ।...বহু দূরে একটা ক্ষীণ নক্ষত্র জলছিল। দেব সেই নক্ষত্র লক্ষ্য করে চললেন । পরক্ষণেই এক স্বন্দর উপবন । এক ক্ষুদ্র নদী বয়ে যাচ্চে উপবনের মধ্য দিয়ে - লতাপাতা কিন্তু পৃথিবীর মত শ্রামল-পুথিবীরই যেন এক শান্ত প্রাচীনকালীন তপোবন । মৃগকুল নিৰ্ভয়ে খেলা করে বেড়াচ্চে, লতায় লতায় বিচিত্র বন্ত পুষ্প প্রস্ফুটিত । এক সৌম্যমূর্তি জ্যোতির্ময় আত্মা লতাবিতানে বসে কি যেন লিখচেন । দেবী ওদের নিয়ে গিয়ে সামনে দাড় করালেন। শুধু তুলে চাইতেই যতীন ও পুপ.এগিয়ে গিয়ে তার পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলে । দেবী বল্লেন-কল্পপৰ্বতের পথে এদের সঙ্গে দেখা । পৃথিবীতে নিয়ে যাবো তাই সঙ্গে করে আনলাম । যতীন ও পুষ্পের দিকে চেয়ে দেবী বল্লেন–রামায়ণ-রচয়িতা কবি বাল্মীকি তোমাদের সামনে । ওরা দুজনেই চমকে উঠলো। মহাকবি বাল্মীকি ! দেবতা স্মিতহাস্তে ওদের বসতে বল্লেনু । আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বল্লেন—এই আমার আশ্রম। ওই পাশেই তমসা নদী। ওই আমার গৃহ । পৃথিবীতে যা আমার প্রিয় ছিল এখানে তাই স্বষ্টি করেচি, ওই আমার স্বর্গ আর তোমাদের সামনে ইনি আমার মানস-দুহিতা—সীতা, যিনি তোমাদের সঙ্গে করে এনেচেন । পুপ, যতীন বিষ্মিত, স্তব্ধ । ভারতবর্ষের ছেলেমেয়ে তারা। সীতার নামে ওদের সর্ব শরীরে বিদ্যুতের ঢেউ বয়ে গেল। কত যুগ ধরে ভারতের আকাশ বাতাস যে পুণ্য নামে মুখরিত, সেখানকার বনের পাখীও যে নামে গান গায়, সেই ভগবতী দেবী জানকী তাদের সম্মুখে ! এ কি