পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bペ বিভূতি-রচনাবলী g t ভগবানের কাজ যারা করেন, তারা জানেন, দুদিনের দেহ, দুদিনের কষ্ট, দুদিনের অপমান । শাশ্বত-আত্মায় কোনো বিকার স্পর্শ করে না, তার জরা নেই, মৃত্যু নেই। যতীন মুগ্ধ হয়ে শুনছিল মহাপুরুষের কথা, এর মধ্যে অবিশ্বাস এনে লাভ নেই। আজ তার অত্যন্ত স্থদিন, এমন একজন লোকের দর্শনলাভ করেচে সে। বৈষ্ণব সাধু আবৃত্তি করচেন— মুকং করোতি বাচালং পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিং যৎকৃপা তমহং বন্দে পরমানন্দমাধবম্ ! যতীনের দিকে চেয়ে বল্পেন—তোমাকে যা কিছু বলেচি, সব তার কৃপা । শ্ৰীধর স্বামীর ঐ শ্লোক তো শুনলে ? তিনিই, মুক যে, তাকে করেন বাচাল। গোপালের এমনি কৃপা, এমনি শক্তি। তার বিশ্ব, তিনি যা কিছু করতে পারেন । যতীন বল্লে-এ ভাবে কত কাল থাকবেন আর ? —অনন্ত কাল থাকতে পারি, যদি তার ইচ্ছা হয় । * হঠাৎ তিনি উৎকর্ণ হয়ে বল্পেন—বৃন্দাবনে গোবিন্দ বিগ্রহের আরতি হচ্চে, চলো দেখে আসি— পুষ্প খুশি হয়ে বল্লে—আমাদের নিয়ে যাবেন! আপনার বড় কৃপা— বৈষ্ণব সাধুর জ্যোতির্ময় ঈষৎ নীলাভ দেহ বোমপথে ওদের আগে আগে উড়ে চলেচে, ওরা তার পেছন পেছন চলেচে। নভোচারী দু-একটি আরও অন্য আত্মাকে ওরা পরে দেখতে পেলে । যতীন কখনো বৃন্দাৰন দেখেনি, তাই বৈষ্ণব সাধু ওকে চার-পাচটি বড় বড় গাছের ক্ষুদ্র বাগান দেখিয়ে বল্পেন—ওই দেখ চারঘাট, ওখানে মহাপ্ৰভু শ্রীচৈতন্য স্বান করে উঠে গোপালের দেখা পেয়েছিলেন। বড় পুণ্যস্থান, প্রণাম করে। তার পরেই একটা বড় মন্দিরের গর্ভগৃহে সেকালের ঝুলোনো প্রদীপের আলোয় একটি স্বন্দর বিগ্রহের সামনে ওরা গিয়ে দাড়ালে। অনেক লোক আরতি দর্শন করচে । একটা আশ্চর্য দৃষ্ঠ যতীন এখানে প্রত্যক্ষ করে স্বৰ্গ-মর্তের অপূর্ব সম্বন্ধ দেখে অবাক হয়ে গেল। দেহধারী দর্শকদের মধ্যে বহু অশরীরী দর্শক এসে দাড়িয়ে বিগ্রহের আরতি দর্শন করচেন, র্তাদের মধ্যে কয়েকটি আত্মার দিব্য জ্যোতির্ময় দেহ দেখে যতীন বুঝলে ওঁরা উচ্চ শ্রেণীর ভক্ত সাধক । যতীনের সঙ্গী বৈষ্ণব সাধু একজনকে দেখিয়ে বল্লেন—কবি ক্ষেমদাস । উনি বৃন্দাবনের বড় ভক্ত, এর মন্দির, এর কুঞ্জবন ছেড়ে থাকতে পারেন না। * যতীন বল্পে—একটা কথা শুনেছিলাম, আত্মিক লোক থেকে বার বার এলে নাকি আত্মার অনিষ্ট হয় ? * সাধু বল্পেন—এসো, কবিকে প্রশ্নটা করি। সাধু ও ক্ষেমদাস পরস্পরকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলেন। সাধুর প্রশ্ন শুনে কবি ক্ষেমদাস হেসে বল্পেন—শ্ৰীক্লপগোস্বামীর উজ্জল নীলমণিতে গোপীদের বিরহের দশদশার বর্ণনা আছে— চিন্তা, উদ্যোগ, প্ৰলাপ, এমন কি মৃত্যুদশ, উন্মাদ রোগ পর্যন্ত । আমার এমন এক সময় ছিল