পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԵյՆ- বিভূতি-রচনাবলী এই সময় নেত্যনারাণ ডাকতে লাগলো চেচিয়ে—ও আশা, শোনো এদিকে—এই আশা- - প্রৌঢ় বাড়ীওয়ালী বারান্দায় বার হয়ে বল্পে—একটু চা থাচ্চে, আপনাকেও পাঠিয়ে দিচ্ছি তৈরী হোলে। আশা এখন যেতে পারবে না । নেত্য গরম মেজাজে ধল্পে - কেন যেতে পারবে না—শুনতে পাই কি ? ও আমার মেয়েমামুষ, আমি যখন ডাকবে, আলবৎ আসবে-ওর বাবা আসবে— এই কথাটা যতীনের বুকে যেন গরম শূলের মত বিধিলো। আশা তার স্ত্রী, বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে যার সঙ্গে সে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েচে--সেই আশ। অপরের ‘মেয়েমানুষ’ ? নেত্যর হুকুমে তাকে চলতে হবে ? যতীনের মাথা যেন ঘুরে উঠলো। এক মুহূর্তে সমস্ত দুনিয়া বিস্বাদ, মিথ্যে, জোলো হয়ে দাড়ালো—মস্ত একটা ফাকি, মস্ত একটা ধাপ্পাবাজির মধ্যে পড়ে গিয়েচে সে । পুষ্প-টুপ, সন্নিসি-টক্সিসি সব এই মস্ত জুয়োচুরির অন্তর্গত ব্যাপার। নইলে অগ্নিপক্ষী করে, হোম করে, বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে যাকে সে সহধর্মিণী করেছিল— কিংবা এই হয়তো নরক । o সে হয়তো নরক ভোগ করচে–ঞ্জীর প্রতি কর্তব্য করেনি, জোর করে তাকে শ্বশুরবাড়ী থেকে এনে কাছে রেখে সংশোধনের চেষ্টা করে নি,ক্লীবের মত নিশ্চেষ্ট হয়ে ছিল, সেও তমোগুণ । তার জন্যেই এই দারুণ নরক তাকে স্বচক্ষে দেখতে হচ্চে, কে যেন টেনে নিয়ে আসচে এখানে, এই শোচনীয় দৃপ্ত দেখতে কে যেন তাকে বাধ্য করচে, নিয়তির মত নিষ্ঠুর সে আকর্ষণ, রেহাই দেবে না তাকে । পুষ্প বল্পে—চলো যতীনদা, আর এখানে থেকে কষ্ট পেয়ো না— যতীন দু:খমিশ্রিত হতাশার স্বরে বল্পে - তুমি অতি করুণাময়ী । তুমি জানো যে এ আমার কর্মফলের ভোগ, এ নরক । তুমি দয়া.করে তাই কেবল এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইচ, আমি সব বুঝতে পেরেচি এবার " কিন্তু পুপ দয়াময়া, আমার সাধ্যি কি, আমি যাই ? চুম্বক যেমন লোহাকে টানে, আশার ভাগ্য ও আমার কর্মফল পরস্পরকে তেমনি টানচে ! টেনে আনচে কোথায় তোমাদের সেই তৃতীয় স্তর থেকে – আমায় সে টানে আসতেই হবে এবং আমি কোথাও যেতেও পারবো না । পুপ দৃঢ়স্বরে বল্লে—তুমি দুর্বল হয়ে হাল ছেড়ে বসে থেকে না, সেও কি পুরুষের কাজ, বীরের কাজ ? তা ছাড়া তোমাকে এই বন্ধন থেকে বাচাবে আমি । নইলে তুমি বুঝতে পারচোন! কি বিপদ তোমার সামনে— 轎 কিন্তু যতীন কিছুতেই না যেতে চাইতে পুষ্প কিছুক্ষণের জন্যে পৃথিবীতে থেকে চলে গেল, বল্পে—পৃথিবীর ভোরের দিকে সে আবার ফিরে আসবে। কিন্তু রাত দুটোর পর নেত্য মদ্যপানের অবসাদে ঘুমিয়ে পড়াতে যতীন ভাবলে এবার সে স্বস্থানে ফিরতে পারে। আশা বাড়ীওয়ালীর ঘরেই ধুমুচে, মৃতর; এখন আর কোনো ভয় নেই, উদ্বেগ নেই। যেন ভয় বা উদ্বেগ থাকলেই সে ভয়ানক কিছু সাহায্য করতে পারতো !