পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

} e: বিভূতি-রচনাবলী পুষ্প তার পাদস্পর্শ বরে প্রণাম করে বল্লে—আমাদের ওপর আপনার এ করুণার জন্য ধন্যবাদ । যতীন বল্লে—প্রভু, আমার সঙ্গে এক মায়াবাদী সন্ন্যাসীর দেখা হয়েছিল, তিনি র্তার নিজের শক্তি আমার মধ্যে সঞ্চারিত করে আমায় নির্বিকল্প সমাধিলাভ করিয়েছিলেন, সে এক অপূর্ব অনুভূতি। সে কথা আমি এখনও ভুলিনি— —তিনি কোনো যোগী সাধক হবেন । ব্রহ্মে লীন হওয়ার আস্বাদ ইচ্ছামত ভোগ করেন —মুক্ত পুরুষ। তারা ইচ্ছামত কায়াবৃহে রচনা করে যে কোনো দেহে অনুপ্রবেশ করতে পারেন । সমস্ত ঐশ্বর্য ওঁদের সংকল্প মাত্রেই উপস্থিত হয়— 总 —প্রভু, ভারতবর্য ছাড়া অন্য কোনো দেশে এই ব্যাপারের চর্চা ছিল ? —নিশ্চয়ই। যে কোনো দেশে যে কোনো সৎ, ঈশ্বরে ভক্তিমান লোক মানব-আবর্তকে জয় করতে পারেন । বিশ্বের যিনি কর্তা, তিনি কোনো ৰিশেষ দেশ বা বিশেষ জাতিকে কৃপা করেন না । t —আচ্ছা আমাদের দেশে যারা বলেন, ভগবানের নাম জপ করলে মুক্তি, যেমন ধরুন বৈষ্ণব সম্প্রদায়, তাদের মত কি সত্য ? —ভক্তি দ্বারা তারা ভগবানে আত্মস্থ হয়ে দেবযান প্রাপ্ত হন । জীব মাত্রেই ব্রহ্মের অংশ জানবে। উপাধি ও নামরূপ ত্যাগ করে পরব্রন্ধে লীন হওয়ার নামই মুক্তি। বিভিন্ন পথ, বিভিন্ন মত। কিন্তু জ্ঞানী লোক ধ্যানদৃষ্টি দ্বারা সেই একই সত্যকে উপলব্ধি করচেন বহু প্রাচীন যুগ থেকে। শুধু এ কল্প নয়, পূর্ব পূর্ব কল্পেও তাই হয়েছিল। পূর্ব পূর্ব কল্পের মুক্ত পুরুষেরা এ কল্পে পৃথিবীতে দেহ ধরে তাদের পূর্ব জীবনের সাধনলব্ধ জ্ঞান প্রচার করতে নামেন। তারাই তোমাদের শ্ৰীকৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, শঙ্কর, চৈতন্য, বাল্মীকি, কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন ইত্যাদি— এই পর্যন্ত বলেই তিনি চুপ করে গেলেন। হঠাৎ পূর্বদিগন্তে অরুণ স্বর্যোদয় দূরদূরান্তরের তুষারাবৃত শৈলশিখর অনুরঞ্জিত করে অপূর্ব মহিমায় স্বপ্রকাশিত হোল এক মুহূর্তে। পলকে পলকে, শিখর থেকে শিখরান্তরে বর্ণসমুদ্রের বিভিন্ন রঙের ঢেউ গেল ছড়িয়ে । সকলে অবাক হয়ে চেয়ে রইল সে মহিমময় সৌন্দর্যের দিকে । করুণাদেবী বলে উঠলেন সাগ্রহে—চলে মানস-সরোবরে--চলো, চলো— তখনি ঠিক পটপরিবর্তনের মত একটা ব্যাপার ঘটে গেল। এই ছিল অরুণরাগে রঞ্জিত শৈলশিখর ও অরণ্যান, তখনি যতীন ও পুঙ্গ বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলে তাদের সামনে কোনো বিশাল জলাশয়ের নীল জলরাশি বিস্তৃত। 龜 অপরকুলে তুষারাবৃত শৈলচুড়, সবে প্রভাত হয়েচে, কিন্তু সেই তুষারময় মেরুবৎ প্রদেশে কোনো বিহঙ্গকাকলী নেই কোনোদিকে। সমগ্র পার্বত্যন্ত্রদের গম্ভীর সৌন্দর্য যতীন ও পুষ্পকে মুগ্ধ করলে । করুণাদেবী বল্লেন--ওই দূঃ রাবণহুদ, সামনে এটা মানস-সরোবর। তরুণদেবতা বল্পেন—সামনের ওই পাহাড়ের চুড়া গুরলা মান্ধাতা আর ওই দূরে কৈলাস—