পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ ᎼᏬ বিভূতি-রচনাবলী পুপ হঠাৎ বলে উঠলো—অামি বলচি তিনি বাড়ী আসবেন, আসবেন । যতীন অবাক হয়ে পুষ্পের দিকে চেয়ে রইল । পুষ্পের মুখে এক অদ্ভুত জ্যোতি ফুটে উঠেছে, ওর কণ্ঠস্বর যেন দৈববাণীর মত শক্তিমান ও অমোঘ ।. কথা শেষ করে যখন পুষ্প ওর দিকে চাইলে তখন পুষ্পের চোখে জল । যতীন বল্লে—কি হোল তোমার, পুষ্প ? পুষ্প তখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। বল্লে--সতীলক্ষ্মী উনি–জয় হোক ওঁর । পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করো মাকে । তারপর দুজনে আরও অনেকক্ষণ সেখানে রইল। যতীনের মায়ের জর ছেড়ে যায় নি, তিনি আবার শয্যায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন, কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে তিনি জর কমবার সঙ্গে সঙ্গে নিজবিভাবে ঘুমিয়ে পড়লেন। যতীন বল্লে— ভালো কথা, মাকে এবার সেই ছবিটি দেখাও না ? যেন এক দেববালক ওঁর মাথার শিয়রে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্চে—এই অবস্থার স্বপ্ন বেশ স্পষ্ট হবে । পুষ্প বল্লে—না । কি জানো যতীনদ, ভেবে দেখেচি তারপর । ওসব ছবি যে দেখে সে সংসার করতে পারে না। মন চঞ্চল হয়ে যায়। পৃথিবীর মন একরকম, ভুবলোকের মন আলাদা । এর সঙ্গে ওকে জড়াতে নেই । ওসব দর্শন হয় কাদের, যারা আধ্যাত্মিক জীবন শুরু করবে। সংসারী লোকদের অমন ছবি দেখাতে নেই। আমি দেখাতে পারি, তোমার মা জেগে উঠে কাদবেন, উদাস হয়ে থাকবেন দিনকতক, সংযুারের কিছু ভাল লাগবে না। প্রতিদিনের সাংসারিক জীবনে মন দিতে পারবেন না । কি দরকার সুস্থ শরীর ব্যস্ত করে । যতীন আগ্রহের স্বরে বল্লে—নয়তো মাকে একবার ঘুমের মধ্যে ভূৰলোকে নিয়ে যাই না কেন ? বেড়িয়ে দেখে আস্থন । . . —উনি এখনও তার উপযুক্ত হন নি । কিছু বুঝতে পারবেন না, হয়তো ওঁর স্বক্ষ শরীর অজ্ঞান হয়ে পড়বে সেখানে । সব এক আজগুবী স্বপ্ন বলে ভাববেন । বুথ পরিশ্রম ৷ চলে যাই, বেলা গেল । নিকটেই এক ঝোপে তিৎপল্লার হলুদ ফুলে রঙীন প্রজাপতির ঝাক উড়তে দেখে ওরা সেখানে গিয়ে দাড়ালো । পুষ্প বল্লে—কি সুন্দর, না ? শুয়োপোকা থেকে কেমন চমৎকার রঞ্জন জীব তৈরি হয়েচে দ্যাখে । শুয়োপোকা মরে যায়, গুটি কেটে প্রজাপতি উড়ে বেরোয় ! মাটিতে কত আস্তে চলে ভয়োপোকা—আর কেমন দ্যাথো প্রজাপতি নীল আকাশের তলায় ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্চে। শুয়োপোকা কল্পনা করতে পারে মরবার পরে সে প্রজাপতি হবে ? যতীন হেসে বল্লে--মানুষ কল্পনা করতে পারে মৃত্যুর পর সে বিশ্বের নীল আকাশের তলায় বিদ্যুদগতিতে উড়ে বেড়াতে পারবে ? শুয়োপোকার মন অন্ধ, মানুষও তেমনি অন্ধ । প্রদোষালোকে স্নানায়মান ধরণী গতির বেগে ওদের পায়ের নীচে কোথায় অস্পষ্ট হয়ে মিলিয়ে গেল ! সেই ধরণীর এক প্রান্তে যতীনের দরিদ্রা জননী গভীর ঘুমে অচেতন রইলেন, জানতেও পারলেন না তার ভাঙা ঘরে এ অদ্ভুত আত্মিক আবির্ভাবের রহস্য ।