পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ১২৩ কাটিয়েচে, তারাই এখানে আসে শেষ জন্মের জন্যে । আর স্থূল শরীর গ্রহণ করতে হয় না তাদের এখানকার মৃত্যুর পর । —তাহোলে পৃথিবীর লোকে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে শুধু ষে পৃথিবীতেই ফিরে আসবে তা नग्न ? —পুথিবীর সঙ্গে আমার পরিচয় কম--তবুও আমি জানি, কোনো জীবাত্মা পুনর্জন্মের সময় সে যে-স্থলজগৎ থেকে এসেছিল, সেখানেই জন্মাবে—তার কি মানে আছে । অৰস্থা আহসারে জীবের গতাগতি নিদিষ্ট হয়। যেখানে পাঠালে যে উন্নতি করতে পারবে, তাকে সেখানেই পাঠানে হয়। অনন্ত উন্নতিতে জীৰাত্মার অধিকার তিনিই দিয়েচেন, যিনি এই বিশ্ব রচনা করেচেন। কে বুঝবে তার করুণা ও মৈত্রী ! খুব উচ্চ অবস্থার আত্মা না হোলে বোঝা যায় না । r ছায়াশীতল শিলাতট ঘন বনশ্রেণীতে ঘেরা। ওরা এসে সেখানে বসেচে। যতীন আর পুষ্প চেয়ে চেয়ে দেখলে এসব গাছপালা তাদের চেনা নেই, পৃথিবীতে এত বড়, এত অদ্ভুত চমৎকার তরুশ্রেণীর সমাবেশ কোথায় ? উগ্র লোভ এখানকার বন নষ্ট করেনি, ব্যবসাতে টাকা উপার্জনের জন্তে । বনকুসুমের স্বগন্ধ, ঝর্ণার কলধ্বনি, পক্ষী-কৃজন, অব্যাহত শাস্তি ও পবিত্রত —সব মিলিয়ে জায়গাটা যেন তপোবনের মত মনে হচ্চে । উনি যা বলচেন সে হিসেবে দেখলে সমগ্র গ্রহটাই তাহোলে একটা সুবিশাল তপোৰন। পুষ্প সময় বুঝে আগের প্রশ্নটি এখানে আবার করলে। বল্লে—আপনি তাকে দেখেচেন প্ৰভু ? পথিক দেবতার মুখ সহসা সন্ত্রমে ও ভক্তিতে কোমল হয়ে এল । তিনি বালকের মত সরল স্বরে বল্লেন—না । —আপনিও দেখেন নি তাকে । পুষ্পের স্বরে বিস্ময় ফুটে উঠেচে । —আমি তার রূপ দেখেচি তার বিশ্ব-সৃষ্টির মধ্যে । তাকে চোখে দেখা যায় আমি জানি । কিন্তু আমি তপস্যা করিনি তাকে সে ভাবে পেতে। আমি ভবঘুরে, তাকে দেখে বেড়াতে চাই র্তারই স্বই লোক-লোকাস্তরে। ভ্ৰাম্যমাণ আত্মা হয়েই আমার আনন্দ । তাই অনেকে আমাকে নাস্তিক বলে । যতীনের হঠাৎ মনে পড়লো করুণাদেবীর কথা। তিনিও তাই বলেছিলেন । পুষ্প বল্পে—প্ৰভু, এই গ্রহে স্ত্রীলোক মাছে ? —কেন থাকবে না? নারী বিশ্বে শক্তির অংশ। এসো-দেখবে। গ্রহে এ অংশটাতে রাত্রি । অন্ত অংশে দিনমান—এদের ঘর সংসার দেখাবো—খুব শাস্ত জীবন-যাত্রা এদের । বহু প্রবৃত্তি ও বাসনার সঙ্গে, বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে সংগ্রাম করে জয়ী হয়ে অভিজ্ঞ হয়ে এ জন্মে পূর্বজন্মের জ্ঞাম ও সংযমের প্রভাবে এরা সমাহিত ও আত্মস্থ হয়েচে । —এদের সমাজ কেমন ?, ইচ্ছে করে প্রভু—জানি— --এই গ্রহের কথা আমি ঠিক জানি না—তবে বিশ্বের এই অঞ্চলে এ রকম:বছ আছে ।