পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SBર বিভূতি-রচনাবলী পুষ্প হেসে বল্লে-ওসব আপনার সঙ্গে, কই আমাদের সঙ্গে তো কোনোদিন একট। কথাও-- হবে। দেখতে পাচি মা, দেখতে পাচ্চি। গোপালের চিহ্নিত সেবিকা তুমি। সাধে কি বলেচি অপুনর্ভব হও? আমার মুখ দিয়ে মিথ্যা বার হয়নি । —আপনি বুড়ো দাদু হয়ে বসে আছেন, দিন দিন ছেলেমানুষ হচ্চেন কেন ? ও রকম বল্পে মেয়ের অপরাধ হয় না ? বৃদ্ধ প্রসন্নমুখে বল্লেন – ঠিক মা ঠিক । যাও দেখে এসো— একটু পরে পুষ্প আবার এসে তার কাছে বসলো। এখানে সে কিজন্তে এসেছিল তা যেন ভুলে গিয়েচে । এ পবিত্র আশ্রমে বসে কি করে ঐ সব কথা বলবে । হয়তো শেষ পর্যন্ত বলতে পারতো না, কিন্তু রঘুনাথদাসই বল্লেন---তোমাকে অন্যমনস্ক বলে মনে হচ্চে কেন ? —আপনি অন্তর্যামী, সব জানেন । লজ্জা করে আপনাকে মুখে বলতে— রঘুনাথ কিছুক্ষণ স্থিরভাবে বসে রইলেন চোখ বুজে। তারপর গভীরভাবে বল্পেন—fক চাও মা ? —সেই হতভাগীর সঙ্গে দেখা করতে বড় ইচ্ছে হয় । কি ভাবে আছে,—যদি কোনো উপকার করতে পারি । t —সেই মেয়েটি প্রেতলোকে রয়েচে । তার চোখ খোলেনি, মনও অপরিণত । তার ওপর আত্মহত্যা-রূপ মহাপাপের ফলে প্রকৃতি একটা প্রতিশোধ নেবে । – একবার দেখা হয় না ? —সে কোথায় আছে জানি না । ভুবর্লোকের নিম্নস্তর, যাকে সাধারণত নরক বলে থাকে পৃথিবীর ভাষায় -সে অনেক বড় জায়গা। তারও আবার অনেক স্তর আছে—চলে দেখি— —প্রভু, আমার সঙ্গে তার একভাবে খানিকটা যোগ আছে, সুতরাং আমি গেলে তাকে বার করা সহজ হবে । —ওসব না । সে মেয়েটি পৃথিবীর যে গ্রাম থেকে এসেচে—তারই নিকটবর্তী কোনো নিম্নলোকে ভ্ৰাম্যমান। স্কুল ধরনের বাসন-কামনা নিয়ে পৃথিবীর আকর্ষণ ছেড়ে উধ্বলোকে ওঠা অসম্ভব। একটু পরে পুপ রঘুনাথদাসকে নিয়ে প্রথমে এল কুডুলে-বিনোদপুর, সেখানে কোনো সদ্ধান না পেয়ে গেল আশার বাপের গ্রাম রম্বলপুরে । কয়েকটি নিম্ন শ্রেণীর ধুসরবর্ণের আত্মা গ্রামের বাশবনে, তেঁতুলগাছের ডালে, মাঠের মধ্যে বাবলা গাছে পা ঝুলিয়ে বসে হাওয়া খাচ্চে। একটি দুষ্ট আত্মা গ্রামস্থ ব্রাহ্মণপাড়ার পুকুরপাড়ের এক নোনা গাছে বসে স্নানরতা স্ত্রীলোকদের দিকে একদৃষ্টি চেয়ে আছে। প্রায় তুরীয় অবস্থায় । পুষ্প মনে মনে হেসে বল্লে—স্তাখো পোড়ারমুখোর কাণ্ড! ইচ্ছে হয় গালে এক চড় বসিয়ে দিয়ে আসি-ই করে যেন কি গিলচে—হি হি— অবিশুি ওই সব নিম্ন স্তরের আত্মার কাছে তার অদৃশুই রইলো। রঘুনাথদাস বল্পেন-চলে, এখানকার কাছাকাছি নিম্নলোকে—এখানেই আছে।