পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখও & অ্যালাম । গাছের আম কড বেশ মিষ্টি, খেয়ে দেখে এখন । আমি ওর সম্বোধনের নতুনত্বে কৌতুক অনুভব করলাম, কিন্তু কি জানি কেনু বড় ভালো লাগলো। গ্রামে অনেকদিন থেকে আপনার জন কেউ নেই, একটা ঘনিষ্ঠ আদরের সম্বোধন করার লোকের দেখা পাইনি বাল্যকালে মা পিসিমা মারা যাওয়ার পর থেকে । প্রতিবেশিনীদের মধ্যে অত বেশি বয়সের স্ত্রীলোক কেউ নেই যে আমাকে “গোপাল’ বলে ডাকে । বুড়ী বল্পে-খাও কোথায় হঁ্যা বাবা ? —খুড়োমশায়ের বাড়ী । —বেশ যত্ব করে তো ওনারা ? —ত করে । —দুধ পাচ্চ ভালো ? —ঘুটি গোয়ালিনী দেয়, মন্দ না। —ও বাবা, ওর দুধ ! আদ্ধেক জল—দুধ খেতি পাচ্চ না ভালো সে বুঝিচি । পরদিন সকাল হয়েচে সবে, বুড়ী দেখি উঠোনে এসে ডাকচে–অ গোপাল— বিছানা ছেড়ে উঠে বল্লাম—আরে এত সকালে কি মনে করে ? হাতে কি ? বৃদ্ধ হাতের নড়ি আমার দাওয়ার গায়ে ঠেস দিয়ে রেখে বল্লে—এক ঘটি দুধ আনলাম তোর জন্তি । —সে কি ! দুধ এত পেলে কোথায় এত সকালে । —আমায় মা বলে ডাকে ওই হাজরা ন্যাটার বোঁ । তার কেউ নেই, মোর চালাঘরের পাশে ওর চালাঘর । ওরে কাল রাত্তিরে বলে রেখে দিয়েলাম, বলি বে, আমার গোপাল দুধ খেতি পায় না। সকালে চা না কি খায়, ওরে খুব ভোরে উঠে গাই দুয়ে দিতে হবে। তাই আজ কুঁকড়ো-ডাকা ভোরে উঠে দেখি আমাদের ডাকচে—ম ওঠে, তোমার গোপালের জন্তি দুধ নিয়ে যাও— 漫 —আচ্ছা কেন বলো তো তোমার এসব ! ছিঃ—না এসব ভালো না । এ রকম আর কখনো এনে না। কত পয়সা দাম দিতে হবে বলে । কতটা দুধ ? அ আমার গলার স্বর একটু রুক্ষ হয়ে উঠেছিল হয়তো, কারণ মুসলমানের বাড়ীর দুধ আমাদের গ্রামে চলে না, কে কোন দিক থেকে দেখে ফেলবে এই ছিল আমার ভয় । কেন আবার এসব বাঞ্চাট জোটে ! বুড়ী আমার কণ্ঠস্বরের অপ্রত্যাশিত রূঢ়তায় যেন একটু ঘাবড়ে গেল, ভয়ে ভয়ে বয়ে— কেন বাবা, পয়সা কেন ? --পয়সা না তো তুমি দুধ পাবে কোথায় ? —ওই যে বল্লাম বাবা, আমার মেয়ের বাড়ী থেকে— —ত হোক, তুমি পয়সা নিয়ে যাও। সেও তো গরীব লোক—