পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী وی বুড়ী পয়সা নিয়ে চলে গেল বটে কিন্তু সে যে বেশ দমে গিয়েচে তার কথাবার্তার ধরনে বেশ বুৰতৃে পারলাম । { - মনে একটু কষ্ট হোল বুড়ী চলে গেলে, পয়সা দিতে যাওয়া ঠিক হয়েচে কি ? বুড়ীর কি রকম হয়তো মন পড়ে গিয়েচে আমার ওপর, স্নেহের দান –এমন করা ঠিক হয়নি। বুড়ী কিন্তু এ অবহেলা গায়ে মাখলে না আদৌ। প্রতিদিন সকাল হতে না হতে সে । এসে জুটবে । —অ গোপাল, এই দুটো কচি শসার জালি মোর গাছের--এই দ্যাও । মুন দিয়ে খাও দিনি মোর সামনে ? —বুড়ী তোমার চলে কিসে? —নাতজামায়ের দেবার কথা, তা সে সবদিন দেয় না। ওই যারে মেয়ে বলি, ও বডড ভালো। লোকের ধান ভানে, তাই চাল পায়, আমারে দুটো না দিয়ে থায় না । —একা থাকো ? 尊 – তা একদিন মোর ঘরখানা না হয় দেখতি গেলে, অ মোর গোপাল ! আমি নতুন খাজুরপাতার চেটাই বুনে রেখে দিয়েলাম তোমারে বসতি দেবার জন্তি । বাউনের ছেলে, মোদের এটোকাটা মাদুরে কি বসবে ? তাই বলি একটা নতুন চেটাই বুনে রাখি, যখন আসবে এখানেতেই বসবে। সেবার বুড়ীর বাড়ীতে আমার যাওয়া ঘটে উঠলো না ওর এত আগ্রহ সত্ত্বেও । নানা-দিকে ব্যস্ত থাকি, তার ওপর আছে সমবয়সী বন্ধুবান্ধবদের দাবি । অনেকদিন পরে গ্রামে এসেছি তো ! যে ক'দিন গ্রামে থাকি, বুড়ী রোজ সকালে একবার আসতে ভুলবে না । কিছু না-কিছু আনবেই—কখনও পাক আম, কখনও পাতি নেবু, ॐधन७ এক ছড়া কাচকলা কি এক ফালি কুমড়ে। দু-আনা চার-আনা প্রায়ই দিই। একদিন একখানা কাপড় দিলাম। একটা জিনিস লক্ষ্য করে আসচি, বুড়ী কোনোদিন আমার কাছে কিছু মুখ ফুটে চায়নি। কখনও বলেনি, পয়সা দাও কি অমুক দাও । বরং তার উণ্টে, শুধু হাতে কখনও আসে না। একবার কলকাতা থেকে কয়েকটি বন্ধু গেলেন দেখা করতে । তাদের নিয়ে ঘরে বসে চা খাচ্চি, স্টেভি ধরিয়ে ঘরেই চা নিজে করেচি, পল্লীগ্রামে এত সকালে কেউ উকুন ধরায় নি, বুড়ী লাঠি ঠুক্-হুঁক্‌ করতে করতে এসে হাজির ৷ বাইরে দাড়িয়ে ডাক দিল, অ মোর গোপাল ! হঠাৎ আমার লজ্জা করতে লাগলো। কলকাতার বন্ধু-বান্ধবদের সামনে, ও আজ না এলেই পারতো ছাই । ভাল বিপদ । 해 —অ মোর গোপাল ! ঘরে আছিল নাকি ? ঈষৎ বিরক্তির স্বরেই উত্তর দিলাম-হ্যা, কেন ? —এই এয়েলাম, বলি যাই গোপালকে দেখে আসি একবার। বন্ধুদের মধ্যে একজন জিজ্ঞেস করলেন -ও কে হে ?