পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

× © বিভূতি-রচনাবলী সাঞ্চনা দেবার স্বরে বল্লাম–কথা ঠিকই তো । —বলো তুমি গোপাল ! ঘাড় নেড়ে বলি—সত্যি তো । আজও সে চালাঘর, সেই মান সন্ধ্য, ছেড়া মাদুরে শোওয়া বুড়ীকে আমার মনে পড়ে ! ছেচতলায় একটা শীর্ণ লাউগাছ, পেছনে কয়েক ঝাড় বাশ, এক-আধটা খেকি কুকুরের আওয়াজ পাড়ায় । শাস্ত ছায়া নেমে এসেচে সামনের সারা উঠোনটাতে । কতকগুলো মেয়ে-পুরুষ দেখতে এসে দাওয়ার ছেচতলায় দাড়িয়ে আছে । আসবার সময় বুড়ীর পাতানে মেয়েটির হাতে কিছু দিয়ে এলাম পথ্য ও ফলের জন্তে । হয়তো আর বেশিদিন বাচবে না, এই অমুখ থেকে উঠবে না। বুড়ী কিন্তু সেযাত্র সেরে উঠলো। দিব্যি সেরে উঠলো । আমি কলকাতায় চলে যাবার আগে দু-একবার আমার কাছে লাঠি ধরে গেল। বসে বসে আপনার মনে কত কি বকে, তারপর চলে আসে । , বছর-দুই কাটলে । এই দু-বছরের মধ্যে যখনই গিয়েছি গ্রামে, বুড়ী এসে বসে, কিছু না কিছু নিয়ে আসবেই । অমৃথটা থেকে উঠে বড় দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সে দুর্বলতা ওর আর সারলো না । আমি বলতাম—কেন আসে৷ রোজ রোজ অতদূর থেকে ? —এই পাকা নোনাডা ভাবলাম গোপালেরে দিয়ে আসি— —ত হোক, তুমি কষ্ট করে এসো না এ রকম । —তুই তো আমারে দেখতি যাবি নে কোনদিন-- —সময় পেলেই যাবো । এখন বাড়ী যাও । কখনও বুড়ী বলত—অ গোপাল, তুই বিয়ে করলি নে কেন ? —মেয়ে পাওয়া যায় না । তা ছাড়া, বয়েস হয়ে গিয়েচে । --কিছু বয়েস হয়নি । কাচা ছেলে তোমরা । ( আমার বয়েস তখন চল্লিশ । ) —বেশ । —ওই মুখুজ্যেদের বাড়ী একটা বড় মৃেয়ে আছে, তোমার সঙ্গে মিল হবে। বলে দেখবানি ওদের ৷ —আমার ঘটকালি করবার লোকের যখন দরকার হবে, তখন তোমায় ডেকে পাঠাবো । এখন যাও । কিন্তু বুড়ী আমার কথা শোনে না । একদিন মুখুজোবাড়ীর নক্ল আমায় ডেকে বল্লে— ওহে, একটা কথা বলি। আজ জমির করাতীর বৌ-বুড়ী বাড়ীর মেয়েদের কাছে গিয়ে বলচে কি, গোপালের সঙ্গে তোমাদের পুটির বিয়ে দাও । মেয়েরা তো অবাক, গোপাল কে ? শেষে জানা গেল—তুমি। ওরা তো শুনে আশ্চর্ষ। তা তুমি কিছু বুড়ীকে বলেছিলে নাকি এ সম্বন্ধে ? আমি নিজেকে নিতান্তই বিপন্ন ও অসহায় বোধ করলাম । বঙ্গাম—লে কি কথা !