পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তুর্মতি নিশ্চিন্তপুর গ্রামের প্রাস্তে হরিচরণ রায়ের ছোট একখানা কোঠাবাডি ছিল । সংসারে থাকিবার মধ্যে তাহার স্ত্রী অার এক ছেলে । হরিচরণ রায়ের বয়স বছর ত্রিশেক, স্ত্রীর বয়স একুশ-বাইশ । হরিচরণ রায়ের লেখাপডা এমন বিশেষ কিছুই জানা ছিল না, তাহার উপর নিতান্তই পাডার্গেয়ে মাঙ্গুষ , কাজেই কোথাও না যাইয়া তিনি বাডী বসিয়। পৈতৃক আমলের সামান্ত একটু জমিজমার খাজনা সাধিতেন। কচু কুমড়া বেগুন—আবাদ করিতেন ঠিক বলা চলে না—পুতিতেন , ইহাতেই তিন প্রাণীর একপ্রকার কষ্টে-হষ্টে সংসার চলিয়া যাইত । পৌষ মাস। খুব শীত । সন্ধ্যার সময় এক দূর প্রজাবাডী হইতে খাজনা আদায় করিয়া হরিচরণ বাড়ী ফিরিয়া আসিল । স্ত্রী বীণাপাণি উঠানের তুলসীতলায় সন্ধ্যা দিতেছিল, স্বামীকে আসিতে দেখিয়া তাড়াতাড়ি তুলসীতলায় প্রণাম সারিয়া, হাসিমুখে কাছে আসিয়া বলিল—তবে যে বলা হল ফিরতে অনেক রাত হবে ? আমি এখনও ডাল বাটিনি । হরিচরণ হাতের পুটুলি নামাইতে নামাইতে বলিল—এলাম চলে। খাজনা তো এক পয়সাও দেবে না, মিথ্যে হায়রান হওয়া । বীণাপাণি হাতের প্রদীপ নামাইয়। রাখিয়া বলিল—একটু দাড়াও, আমি কুয়ো থেকে টাটক জল তুলে দি, তবুও একটু গরম হবে এখন। এবার যে শীত পডল তাতে পুকুরের জলে আর কাজ চলবে না । # হরিচরণের ছেলে নীপু বাবার গলার স্বর পাইয়। ঘরের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আসিল । মাকে নিশ্চিন্তমনে তুলসীতলায় প্রদীপ দিতে দেখিয়া সে ঘরের মধ্যে তাকের হাডি হইতে আমসত্ব চুরির কাজে ব্যাপৃত ছিল । বাবার গলার স্বরে বুঝিল বিপক্ষ সজাগ হইয়াছে। সে ক্ষুন্নমনে বাহির হইয়া আসিয়া বাবার বড় পুটুলিট। দেখিয়া হঠাৎ নিজের অসাফল্যের দুঃখট। ভুলিয়া গেল। বাবাকে সে একটু ভয় কল্পিত । হঠাৎ কাছে না আসিয়া আঙুল দিয়া পুটলিট। দেখাইয়া জিজ্ঞাসা করিল—কি বাবা এতে ? হরিচরণ বলিল—হঁ্যারে, এই বঁাদর, এই শীতে একটা কিছু গায়ে দিতে নেই তোর ? ওগো, নীপুর সে দোলাইখানা কোথায় গেল ? বীণাপাণি জলের বালf৩ নামাইয়া বলিল—সেই বিকেলবেলা থেকে বলছি ছেলেকে, ও কি কারুর কথা শোনে । গ!" দিয়ে দিলেও গায়ে রাখবে না। ওই তো, কাঠের আলনায় দোলাই রয়েছে । 教 হরিচরণ বলিল-ই ! সে বেতখানা কোথায় গেল ? নীপু প্রমাদ গনিয়া মার মুখের দিকে চাহিল। বীণাপাণি বলিল—থাক গো, আজ আর কিছু ব’লে না। তারপর ছেলেকে কাছে টানিয়া বলিল—এবার ফের কিন্তু যেদিন—