পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখও ఫి) মশায়, রানাঘাট যাব সেদিন । আমার থিওরি অব রিলেটিভিটির সঙ্গে পরিচয় অবিপ্তি লিণ্ডেন বুলটনের পপুলার বই থেকে। তবুও আইনস্টাইনকে আমি এ যুগের ঋষি বলে মানি। সত্যকার এটা ঋষি। সত্যকে ধারা আবিষ্কার করেন, তারাই মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি লম্বা লম্বা লাঙল মার্ক ইকোয়েশন বুঝতে না পারি, কষতে না পারি, কিন্তু কে কি দরের সেটুকু—।” রায় বাহাদুর দেখিলেন চতুর খালকটি তাহাকে ঠেস দিয়া কথা বলিতেছে। হাসিতে হাসিতে বলিলেন,—“অর্থাৎ সেই সঙ্গে আমার দরটাও বুঝি ঠিক করে ফেললে বিনোদবাবু ? বেশ, বেশ ।” —“রামোঃ ! চাটুয্যে মশায়, ছিছি, তেমন কথা কি আমি বলি ?” —“বল না ?”. —“স্পেস-টাইম—কনটিনিউয়ামের মোহজালে পড়ে কোনটা কখন কি অবস্থায় বলেছি, তা কি সব সময় হলফ নিয়ে বলা যায় চাটুয্যে মশায় ? এবেলা এখানে থেকে যাবেন না ?” —“না না, আমার থাকবার জো নেই। অনেক কাজ বাকি। যাতে দুপয়সা হয় ভঞ্জলোকের, সে ভার আমার ওপর। দেখি মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যানদের একটু ধরাধরি করিগে। ঘুঘু সব । হুলটা যদি পাওয়া যায়—” —“কি বলেন আপনি চাটুয্যে মশায় । আইনস্টাইনের নাম শুনলে হল না দিয়ে কেউ পারবে ? আহা, শুনলেও কষ্ট হয়, অত বড় বৈজ্ঞানিককে আজ এ বৃদ্ধ বয়সে পয়সার জন্তে বক্তৃতা করে অর্থ সংগ্রহ করতে হচ্ছে—দি ওয়ার্লড ডাজ নট নো ইটুল গ্রেটেস্ট—” —“তুমি এখনও ছেলেমানুষ বিনোদ । ঐ যা শেষকালে বললে ঐ কথাটাই ঠিক। অনেক ধরাধরি করতে হবে। পাচটা চল্লিশের ট্রেনেই যাই ।” ইহার পরের কয়েকদিন রায় বাহাদুর অত্যন্ত ব্যস্ত রছিলেন। রানাঘাট মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, স্কুলের হেডমাস্টার, উকিল, মোক্তার, সরকারী কর্মচারী ও ব্যবসাদ্বারগণের সঙ্গে দেখা করিয়া সব বলিলেন। আশ্চর্যের বিষয় লক্ষ্য রাখিলেন, সকলেরই যথেষ্ট উৎসাহ, সকলেরই যথেষ্ট আনন্দ । যেন সবাই আকাশের চাদ হাতে পাইতে চলিয়াছে। বৃদ্ধ মোক্ত্যর অভয়বাবু বলিলেন,—“কি নামটি বললেন মশাই সাহেবের । আ—কি ?’অ|—ইন স্টাইন ? বেশ বেশ । ই, বিখ্যাত নাম। সবাই জানে সবাই চেনে। ওঁরা হলেন গিয়ে স্বনামধন্য পুরুষ-নাম শোনা আছে বইকি ৷” 尊 রায় বাহাদুর রাগে ফুলিয়া মনে মনে বলিলেন—তোমার মুণ্ডু শোনা আছে, ড্যাম ওল্ড ইডিট। এ তুমি কাপুড়ে মহাজন শুমচা পালকে পেয়েছ ? স্বনামধন্ত । তিন জন্ম কেটে গেলে যদি এ নাম তোর কানে পৌছয়। মিথ্যে সাক্ষী শিখিয়ে তো জন্ম খতম করলি, এখন আইনস্টাইনকে বলতে এসেছে স্বনামধন্ত পুরুষ ! ইডিয়সির একটা সীমা থাকা চাই । নির্দিষ্ট দিনে রায় বাহাদুর কৃষ্ণনগর কলেজের কয়েকটি ছাত্র সঙ্গে লইয়া সকালের ট্রেনে রানাঘাটে নামিলেন। তার শাল বিনোদ চৌধুরী দুঃখ করিয়া চিঠি লিখিয়াছে, বিশেষ কাৰ্যবশত তাহার আসা সম্ভব হইল না, আইনস্টাইনের বক্তৃতা শোনা কি সকলের ভাগ্যে ঘটে, ইত্যাদি।