পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিধু মাষ্টার ৩৯ —বা — ! এমন কি, মনে হইল যে ছোকরা যেন স্বলোচনার উপর জোর খাটাইতেছে । রাগ হইল—কোথা হইতে উডিয়া আসিয়া জুড়িয়া বসিয়াছ বাপু ! স্বলোচনাকে আমরা ছেলেবেলা হইতে জানি, তুমি তখন জন্মও নাই। আজ আসিয়াছ আমাদের সামনে মুলোচনাকে ঘড়ি দেখিয়া টাইম বলিয়া দিতে মুলোচনা যে খুব ভাল মেয়ে নয়, এ ধারণ আমার পূর্ব হইতেই ছিল, এখন সোধারণা আরও বদ্ধমূল হইল। বেচারী প্রকাশদী ! মেয়েদের ভালবাসার এই তো মূল্য। অন্তত মুলোচনার মত মেয়েদের । মনটা অশ্রদ্ধায় পূর্ণ হইয়া গেল। স্বলোচনাকে লইয়া ছোকরা স্টেশনের দিকে চলিয়া গেল। স্বলোচনা যাইতে যাইতে আমার দিকে ফিরিয়া বলিল—দমদমায় বাসা আজকাল । যে ও একদিন—ম আছেন বাসায় । বিস্কুটের কারখানার পিছনে নরেশ পালের বাগানবাড়ী— বলা বাহুল্য, দমদমার নবেশ পালের বাগানবাড়ী খুজিয়া সেখানে যাইবার সুবিধা ও সময় আমার হইয়া উঠে নাই। বছরখানেক পবে ইউবোপীয় মহাযুদ্ধ আরম্ভ হইবাব পূর্ব বৎসর ১৯১৩ সালে আমি সন্ধ্যার দিকে এসপ্ল্যানেডের মোডে ট্রাম ধরিবাব জন্য অপেক্ষা করিতেছি, এমন সময় একখানি ট্রাম আমার সামনে আসিয়া দাডাইল । হঠাৎ দেখিলাম প্রথম শ্রেণীর কামরায় একখানি বেঞ্চিতে মুলোচন। এক বসিয়া আছে। আমি তখনই বিন্দুমাত্র না ভাবিয়া ট্রামখানাতে উঠিয় তাহার পাশে বসিয়া পডিলাম। সুলোচনা প্রথমটা চমকিয়া উঠিয়াছিল, পরে আমাকে দেখিয়া ও চিনিতে পারিয়া ভারি খুশী হইল। বলিল—উ:, যা ভয় দেখিয়ে দিয়েছিলে! আমি বলি কে এসে ঝুপ কবে পাশে বসে পডল রে বাবা —ভাল ? কতদিন দেখা হয়নি—সেই শেয়ালদা স্টেশনে সেবার—দাড়াও, প্রণামটা করি। কথাবাৰ্ত্ত বলিতে বলিতে চাদনির মোডে ট্রাম আসিল । মুলোচনা বলিল--নাম এখানে যদু-দা, কুরুশ কাট। কিনব আর ছেলেটার জন্তে হৰ্গিক কিনব। আমি উহার মুখের দিকে আশ্চৰ্য্য হইয়া চাহিয়া আছি দেখিয়া স্বলোচনা সলজ্জমুখে বলিল—আজকাল আমার স্বামী এসেছেন যে, আজ প্রায় বছরখানেক । এখন যে রোজগার করছি দু-পয়সা, আসবে বৈকি। এতদিন কেউ খোজও নেয়নি । —আজকাল কি কর ? —বা রে, আজকাল তে ক্যাম্বেলে নাসগিরি করি। এতদিন নসদের হোস্টেলে ছিলাম —এখন স্বামী ফিরে আসতে বাসা করেছি দমদমাতে। সেই আর বছর যখন তোমার সঙ্গে দেখা তখন থেকে দমদমায় বাসা । এস না আজ, চল—আমার খোকাকে দেখে আসবে এখন— —না, আজ থাক, আর এক দিন হবে। চল—চ খাবে মুলোচনা ? —শোন বলি। তুমি হলে গিয়ে খোকার মাম, শুধু হাতে যেন ফ্ৰেণ্ড না। ওকে একটা হার কেন দাও না ?