পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বিভূতি-রচনাবলী মুলোচনা বলিল—তুই বিয়ে কর মামা। খুব খুশী হব তাহলে। আমার যদি সন্তুষ্ট করবার তোর ইচ্ছে থাকুে খুব শীগগির একটি ভাল মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেল। * নৃতন বাসায় প্রকাশদা কিন্তু বেশি আসিতেন না এবং আসিতেন না বলিয়াই আমাদের বাসায় যেদিন প্রকাশদার আসিবার কথা থাকিত, সেদিন সুলোচনা এখানেই তার সঙ্গে দেখা করিত। এই সময় আলিপুর বোমার মামলা আরম্ভ হইল। কি করিয়া প্রকাশদা ইহার মধ্যে জড়াইয় পড়েন সে-কথা সুলোচনার মা আমায় বলিতে পারে নাই। প্রকাশদ দীর্ঘদিন অস্থপস্থিত রছিলেন। স্বলোচনা বড় ব্যস্ত হইয়া ছটফট করিত বলিয় তাহার মা একদিন কলেজে খোজ করিতে গিয়া জানিল কলেজেও প্রকাশদা বহুদিন যাবৎ অনুপস্থিত। ছ মাস পরে প্রকাশদ হঠাৎ একদিন এক হাড়ি রসগোল্লা হাতে ওদের বাসায় আসিয়া হাজির। স্বলোচনা তো খবর পাইয়াই চুটিতে ছুটিতে বাহিরের ঘরে আসিল । বলিল—কোথায় ছিলে প্রকাশদা এতদিন ? চেহারা এমন হয়েছে কেন তোমার । " o প্রকাশদ বলিলেন—সে কথা জিজ্ঞেস করিস কেন স্ব। তা ছাড়া, এই শেষ । আমি স্বদেশীর আসামী, পুলিশ পেছনে ঘুরছে—আর আসতে হয়তে পারব না। যাবার সময় একটা কথা জিজ্ঞেস করে যাই—হয়তো আর দেখাই হবে নী—স্ব, তুই আমায় কখনও ঘূণা করবি নে বল ? সুলোচনা বলিল—তোমাকে অনেক ভালবাসি প্রকাশদা । যদি স্বামী না থাকত, তবে তোমার আরও নিকটে আসতুম। পা ছয়ে বলছি—ত না হলে তোমার এই বিপদের সময়ে তোমার সঙ্গে চলে যে তুম।—একলা যেতে দিতুম না। বলিয়াই সে কাদিয়া ফেলিল । to মুলোচনার মা আমায় বলিল—মেয়ে আমার কখনও কঁদিত না । এই অনেকদিন পরে কাদল। যাবার সময় প্রকাশকে কড়ার করিয়ে নিলে বিপদ উদ্ধার হলেই আবার ফিরে এসে সকলের আগে ওর সঙ্গে দেখা করবে। কিন্তু প্রকাশ সেই যে গেল, আর কখনও ফিরে আসে নি । আমি বলিলাম—তার পর ? আপনাদের কি হল ? —তার পর প্রকাশ তো চলে গেল। শোন সব কথা, বিশ্বাস করবে না হয়তো । এই কলকাতা শহরে সেই পোড়ারমুখী মেয়ের আগুনের মত রূপ নিয়ে সে কি কষ্ট, কি বিপদ গিয়েছে আমাদের ! দেখেছিলে তো তাকে ? o দেখিয়াছিলাম বই কি। আবার এই প্রায় কুড়ি-বাইশ বছর পরে শ্রদ্ধানন্দ পার্কে অপরাহের মৃদ্ধ স্তিমিত রৌদ্রালোকে সুলোচনার সেই অপূৰ্ব্বসুন্দর কিশোরীমূৰ্ত্তি স্পষ্ট মনের চোখে ফুটিয়া উঠিল। তার সেই ভাগর ডাগর চোখ, ঘন-কালো চুলের রাশি-কথার সেই তজি চমৎকার মুখের হাসি.সৰ্ব্বোপরি তার অনিৰ্ম্ম্য মুখশ্ৰী. তখন স্বলোচনাকে বুঝি নাই, চিনি নাই—অভিজ্ঞতার অভাবের দরুন স্বলোচনাকে সে