পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭ বিভূতি-রচনাবলীw ছিল—তার পর আর কখনও দেখি নাই বটে, কিন্তু এখন মনে হইতেছে অতগুলি মেয়ের মধ্যে এই মেয়েটির ব্যবহার-ছিল সৰ্ব্বাপেক্ষ আন্তরিক ও সরল, তখনকার মনোভাবে আমি ইহাকে সেইজন্তে আমল দিই নাই—গায়েপড় বলিয়া মনে করিতাম। শাস্তি বলিল-আপনি আজকাল থাকেন কোথায় ? —কলকাতাতেই আছি আজ আট ন বছর । খবরের কাগজের আপিলে চাকরি করি। —বিয়ে করেছেন ? - —বহুদিন । —ছেলেপিলে হয়েছে ? —চার মেয়ে। আর কিছু শুনতে চাও? —বাজে কথা । আপনি কক্ষনো বিয়ে করেন নি । —এ কথা ভাববার হেতু কি ? —আপনাকে আমি খুব ভালই জানি। আমার চোখে ধূলো দিতে পারবেন না। বলুন সত্যি কি না ? হাসিয়া ফেললাম, সঙ্গে সঙ্গে বড় ভালও লাগিল। পনের বছর পূৰ্ব্বে এক-আধ বছরের জন্য যে মেয়ের সঙ্গে অত্যন্ত ভাসা-ভাসা ধরনের আলাপ হইয়াছিল তাহাকে আমার চরিত্র ও মনোবৃত্তি সম্বন্ধে এমন নিঃসন্দিগ্ধ মত প্রকাশ করিতে দেখিয়া ভাল লাগিবার কথা বটে। এ এমন এক ধরনের আত্মীয়ত যাহা অন্য কোনও উপায়ে প্রকাশ করা যায় না, বা অন্য কোনও ধরনের ব্যবহার দ্বারা ইহার স্থানও পূর্ণ হয় না ! বলিলাম—ধরে যখন ফেলেছ শান্তি, তখন মিথ্যে বলে লাভ নেই। বিয়ে এখনও করি নি । শান্তি সগৰ্ব্বে বলিল—দেখুন, বললাম যে আপনাকে তখনই আমি চিনে ফেলেছিলাম, ঠিক কিনা ভাল করে বলুন এবার। বলিলাম—তাহলে এখন আসি শাস্তি—সভার পরে না হয় আসব এখন একবার । তোমার স্বামী কখন আসবেন ? আলাপ হলে বেশ আনন্দ হত । সন্ধ্যের পর ? বেশ, আমারও আসতে রাত আটটা বাজবে, বুঝেছ। —এখানে আজ রাত্রে খাবেন কিন্তু, বলা রইল । সভার পরে পুনরায় শান্তির ওখানে ফিরিতে প্রায় রাত্রি নয়টা বাজিল। শাস্তির স্বামীর সঙ্গে আলাপ হইল—বেশ ভাল লোক। আমার আসিবার খবর শুনিয়া ভদ্রলোক বাছিয়া বাছিয়া বাজার করিয়াছেন, সব রান্না শেষ করিতে শান্তির বেশ সময় লাগিবে—রাত দশটার কমে রান্না সাঙ্গ হইবে বলিয়া মনে হইল না। শাস্তি চা করিয়া দিয়া গেল। আমি বসিয়া তাহার স্বামীর সঙ্গে গল্প করিতে লাগিলাম । பி மு একবার শান্তি রান্নাঘর হইতে আসিয়া বলিল—বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে? —ও জিনিসটির প্রাচুর্ভাব তোমাদের আতিথেয়তার কল্যাণে আদৌ হবার উপায় নেই।