পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিধু মাষ্টার ፵፭ তা বটে । রায় সাহেব কুণ্ডু মশায়ের দিকে চেয়ে বললেন—যাও সব, শদিতে,যাও। এখানে হল্লা করবার জন্তে তোমাদের রাখা হয় নি—কবিতা লেখবার জন্তেও নয়। যাওঁ—কুণ্ডু মশায়, মহাজনের দেনাপাওনার হিসেবটা বেলা পাচটার মধ্যে ঠিক করে ফেল গিয়ে। যাও সব । পরে ঘরের চারিদিকে অপ্রসন্নদৃষ্টিতে চেয়ে বললেন–নিজেরা থাকে—অথচ ঘরদোর বিছানাপত্তর কি নোংরা করেই রাখে—রামো: ওসতীশ, দশগজ ফুলন শাড়ীর একজোডা কাল হিসেবের খাতায় ওঠে নি কেন ? সতীশ-নামধেয় লোকটি এতক্ষণ তাসের আডিডায় বেশি চেঁচামেচি করছিল। সে যেন অতিরিক্ত বিস্ময়ে হঠাৎ কাঠ হয়ে বললে—সে কি বাবু । দশগজ ফুলন শাভী কাল কে বিক্রি করলে ? এই তো কুণ্ডু মশায়, জানেন ? কুণ্ডু মশায় নিজের গা থেকে ঝেড়ে ফেলে বললেন—আমি কি জানি বাপু । আমি খতেন রোকড় নিয়ে আছি, তোমদের খুচরো বিক্রির তবিলে কি হয় না হয়—

  • রায় সাহেব বলিলেন—সব চোরের আড্ডা হয়েছে। ভাত-কাপড় দিয়ে চোর পোষা। আচ্ছা, আজ ধরা পডলে তাকে আমি জবাব দেব, নয় এক মাসের মাইনে কাটল ।

রায় সাহেব চলে গেলেন । এই হল কুণ্ডু মশায়ের প্রতিদিনের জীবন। এই অত্যন্ত স্কুল আবহাওয়ার মধ্যে একটি কবিপ্রাণ কিভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারে, তা আমার অভিজ্ঞতার লেখ নেই। কুণ্ডু মশায়ের এই বয়সেও যে সজীবতা অত্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরিস্ফুট, ছাইপাশ আহারেও তার যে তৃপ্তি, এত হট্টগোল ও অপমানের মধ্যেও তার যে আনন্দ-এ সবের জন্ত সমঝদব লোকমাত্রেই তাকে হিংসে না করে পারবে না । র্তার সঙ্গে আমার দেখাসাক্ষাৎ আর অনেকদিন হয় নি । এর প্রায় পাচ বছর পরের কথা। অন্ত জায়গায় কাজ করি বলে দেশে আসা ঘটে নি অনেকদিন । দেশের বাড়ীঘর ভেঙে গিয়েছিল, মিস্ত্রি লাগিয়ে মেরামত করছি। —এই যে খামবাবু, প্রাতঃপ্রণাম । இ চেয়ে দেখি, কুণ্ডু মশায়। আরও বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছেন, মাথায় আর এক গাছাও কঁচা চুল নেই। সেই পুরনো ধরনেই বেনিয়ান গায়ে । • –কি ব্যাপার কুণ্ডু মশায় ? ভাল আছেন বেশ ? খবর কি ? –বাৰু পাঠিয়ে দিলেন। আপনি বাড়ী করবেন,—চুন সিমেন্ট নেবেন আমাদের নতুন আড়ত থেকে । দর সস্তু ১ —ও। কে, ঘনশ্বামবাবুর চুনের আড়ত খুলেচেন বুঝি ? —চুন, সিমেন্ট, মগরার বালি—