পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিধু মাষ্টার SJ) বললে—চল মা মাসীমার সঙ্গে দেখা করে সীতাকুণ্ডে স্নান করে আসা যাবে। কখনও মুঙ্গেরে যাই নি—ভালই হল, চল এই মকর-সংক্রাপ্তির ছুটিতে— o একথা ঠিকই যে, এই দীর্ঘ ছাব্বিশ বৎসর পরে মুহাসিনী মাসীমাকে দেখবার সে বাল্য-ও প্রথম-যৌবন-দিনের আগ্রহ ছিল ন—তবুও কৌতুহলে এবং মনের পুরনো অভ্যেসের বশে একদিন মুঙ্গেরে গিয়ে ওঁর সঙ্গে দেখা করবার সঙ্কল্প করলুম। কিন্তু পুনরায় বাধা পড়ল। পৌষ মাসের শেষের দিকে সাহেবগঞ্জে ভীষণ কলেরার প্রাদুর্ভাব হল—আমি ছুটি নিয়ে সপরিবারে দেশে পালালুম। দিন উনিশ-কুড়ি পরে যখন ফিরলুম তখন মকর-সংক্রান্তি পার হযে গিয়েছে, মুঙ্গেরে যাওয়ার কথাও চাপা পড়ে গিয়েছে। এর মাস-চার পরে আবার কানাইএর সঙ্গে দেখা জামালপুরে। বললে—ওহে, তোমরা কই গেলে না ? তোমাকে খবর দেব ভেবেছিলুম—কি বিপদ গেল যে 1 জামাইবাৰু মারা গেলেন ও মাসের সতেরোই । সুহাসিনী মাসীমা বিপ্লব ! বললুম—ওঁরা এখনও কি— —না না । দেওর এসে নিয়ে গেল শ্বশুরবাড়ী । মস্ত ডাক্তার দেওর—য়্যাসিস্ট্যান্ট-সর্জন, গভর্নমেন্ট সার্ভিস করে। জামাইবাবুর চেয়ে অনেক ছোট । এইবার চার-পাচ বছরের দীর্ঘ ব্যবধান—যখন মুহাসিনী মাসীমার কথা কারও কাছে শুনি নি। তার পর একদিন আমার মাসীম কাশী থেকে এলেন । বাল্যকালের সে দিনটি থেকে কতকাল চলে গিয়েছে—যে মাসীমা তখন ছিলেন তরুণী, তিনি এখন কাশীবাসিনী । আমারও বয়স উনচল্লিশ । @ মাসীমা বললেন—দশাশ্বমেধ ঘাটে রোজ মুহাসিনীদিদির সঙ্গে দেখা হত কিনা । চমৎকার মেয়ে সুহাসিনী দিদি, ওর সঙ্গে মিশে সময় যে কোথা দিয়ে কেটে যেত। মস্ত বড় সাধুর কাছে দীক্ষা নিয়েছে। কি মুন্দর গীতার ব্যাখ্যা করে। ওর মুখে গীতাপাঠ শুনতে শুনতে রাত যে কত হচ্ছে তা ভুলেই যেতুম। আহ, কি মেয়ে মুহাসিনী দিদি ! 羲 বহুকাল পরে মুহাসিনী মাসীমার আবার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুনলাম। মুহাসিনী মাসীমা চিরকাল লোকের প্রশংসা কুড়িয়ে গেল—কপাল এক-একজনের। আমার ঠোটের আগায় এ প্রশ্ন কতবার এল—মুহাসিনী মাসীম আজকাল দেখতে কেমন ?-- বহুকাল তার রূপের প্রশংসা কারও মুখে শুনি নি। 動 • কিন্তু আমার মনের সেই বাল্যকালে গড় মানসী রূপসী সমানই ছিলেন। বাল্যে তিনি ছিলেন শুধু রূপবতী, এখন রূপের সঙ্গে যোগ হল আধ্যাত্মিকতা। মুহাসিনী মাসীমা একেবারে দেবী হয়ে উঠলেন আমার মনে। আর এটাও মনে রাখতে হবে, দেবীদের মধ্যে সবাই তরুণী —বৃদ্ধ দেবী কেউ নেই।