পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫి8 বিভূতি-রচনাবলী পরের বছরই আমার চাকরির কাজে আমায় কাশী যেতে হল তিন চার দিনের জন্তে । আমার বয়স চল্লিশ । মাসীমা যে বাড়ীটাতে থাকতেন, সেখানে মামার বাড়ীর গ্রামের আর একজন বৃদ্ধ থাকতেন। তার নাম তারকের মা—তিনি জাতে কৈবৰ্ত্ত, তার ছেলে তারকের নৈহাটিতে বড় দোকান আছে । আমার ওপর ভার পড়ল, তারকের মায়ের কাছ থেকে মালীমার একটা হাত-বাক্স নিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া । বেলা দশটা। মন্দিরাদি দর্শন করার পরে দশাশ্বমেধ ঘাটে স্বান করতে নামছি। সঙ্গে আছে তারকের মা । তারকের মা স্নানার্থীদের ভিড়ের মধ্যে কাকে সম্বোধন করে বললে--দিদি ঠাকরুনের আজ ষে সকাল সকাল হয়ে গেল ?—যাকে উদ্দেশ করে বলা গেল তিনি কি উত্তর দিলেন আমি ভাল করে শোনার আগেই তারকের মা আমার দিকে চেয়ে বললে—চিনতে পারলে না শচীন ? আমাদের গায়ের কানাই-এর দিদি সুহাসিনী—চেন না ? বোধ হয় একটু অন্তমনস্ক ছিলাম, কথাটা কানে যেতেই চমকে উঠে দেখি একজন মুক্তিতমস্তক, স্থূলকায় বুদ্ধ, এক ঘটি জল হাতে সিক্ত-বসনে উঠে চলে যাচ্ছেন। ফর্স রং জলে গেলে যেমন হয় গায়ের রং তেমনই, মুখের চামড়া কুঁচকে গিয়েছে—নিতান্ত নিৰ্ব্বোধ নিরীহ পাড়াগায়ের বুড়িদের মত মুখের চোখের ভাব। সেই মুহাসিনী মালীম ! আমি কি আশা করেছিলুম এই সুদীর্ঘ ত্রিশ বছর পরেও মুহাসিনী মাসীমাকে রূপসী যুবতী দেখতে পাব ? তবে কেন যে ভীষণ আশ্চৰ্য্য হয়ে গেলুম, কেন যে মন হঠাৎ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল—কে জানে । বড় ক্লাস্ত বোধ করলুম-ভীষণ ক্লান্ত ও নিরুৎসাহ । ভাবলুম কাশীর কাজ তো মিটে গিয়েছে, মাসীমার বাক্সট নিয়ে ওবেলার ট্রেনেই চলে যাব। থেকে মিছিমিছি সময় নষ্ট । অভিশাপ —”এই সেই প্রতুাপনারায়ণ চৌধুরীর বাড়ী।" আমি সবিস্ময়ে সেই ভগ্নস্তপের পানে চাহিয়া দেখিলাম। এই সেই প্রতাপনারায়ণ চৌধুরীর বাড়ী ? সহজে বিশ্বাস করিয়া উঠিতে পারিলাম না। দিনান্তের অস্পষ্ট আলোক যাই যাই করিয়াও আকাশের পশ্চিমপ্রস্তে তখনও অপেক্ষা করিতেছিল। পরিশ্রাস্ত বিহুগকুলের অবিশ্রাম কুজনধ্বনি রহিয়া রহিয়া তখনও আকাশ-বাতাস মথিত করিয়া দিতেছিল। গঙ্গার অপূৰ্ব্ব তরঙ্গভঙ্গ চিত্তলোকে এক অজ্ঞাতচেতনার সঞ্চার করিতেছিল, সেই প্রঘোষের মান দ্ব্যক্তিবিকাশের অন্তরালে আমি প্রাতঃস্মরণীয় সুবিখ্যাত প্রতাপনারায়ণ চৌধুরীর প্রাসাদের পানে চাহিয়া দেখিলাম। -গঙ্গার ঠিক তীরভূমিতে অগণিত লতাপল্পৰে মণ্ডিত হতন্ত্র প্রতাপ