পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8i- বিভূতি-রচনাবলী . আমি কলেজ ছেড়ে দিলাম••• 歌 কলেজে তিলে তিলে দগ্ধ হোতে পারবে না আমি । মেডিকেল কলেজে মড়া-কাটা আমার দ্বারা হবে না। & * বি-এলসি পড়লুম, প্রথম শ্রেণীর অনার্স পেলুম। এম.এসসিতে দ্বিতীয় শ্রেণী বটে, কিন্তু সেবার আমার বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে কেউ ছিল না । কলকাতায় একটা কলেজের অধ্যাপকের চাকরি জুট গেল সহজেই। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া কঠিন হোত না, কিন্তু আমি নিঝৰ্ব্বাটে কাটাতে চাই জীবন । পয়সার অভাব নেই আমার ভগবানের ইচ্ছায়। কার জন্তেই বা অত খাটতে যাবো ? না বিয়ে-থাওয়া, না ছেলেপূলে, বেশ श्रांछ् ि। নির্মলার কথা ভুলি নি । তার জন্যেই বিয়ে করতে পারলুম না। এ যে কি টান, কি মোহ, কি করে বলবো । মন থেকে কিছুতেই তাড়াতে পারলাম কই ? নির্মলার বিয়ে হয়েছিল একজন বিলেত-ফেরত ডাক্তারের সঙ্গে" নিজে সে একজন লেডি ভাক্তার ৷ একবার তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল কিভাবে তা বলি । লেডি ডাফরিন হাসপাতালে নির্মলা তখন কাজ করে, আমি জানতাম । রোজ কলেজ থেকে বেরিয়ে লেডি ডাফরিন হাসপাতালের কাছে এসে মুখ উচু করে করে দাড়াই। সম্পূর্ণ অকারণে, কেন দাড়াই নিজেই তা জানি নে। কলেজের ছুটির পর পা ছু-খানার গতি হয় লেডি ডাফরিন হাসপাতালের দিকে—আপনিই হয় । যে সময়ের কথা বলচি, তখনও নির্মলার বিবাহ হয় নি । একদিন ওই রকম অভ্যাসমত এসে দাড়িয়েচি স্কট্স লেনে, হাসপাতালের ঠিক নিচে। এমন সময়ে এল বর্ষা । সেটা ছিল আশ্বিন মাস। আমার কাছে ছাতি নেই-ছাতি বওয়া আমার অভ্যাস নেই। দাড়িয়ে ডিজচি, সরে যেতে ইচ্ছে করচে না, ভিজে যাচ্ছি তবুও কিসের আশায় চাতকু পাখীর মত আকুল আগ্রহ নিয়ে মুখ উচু করে দাড়িয়েই অসাড়ে ভিজচি–বোধহয় সাধনার কঠোরতায় সিদ্ধি আলে সর্বসিদ্ধিদাতা ভগবানের কাছ থেকে । তিনিই দক্ষিণ পাণি প্রসারিত করে অকপট সাধনার ফল হাতে হাতে দেন । তাই শব-সাধনার এত নাম আমাদের দেশে । স্বাতাস্থাতি সিদ্ধিলাভ । শবংসাধনা টব-সাধনা যাক গে। আমার ফল এল সম্পূর্ণ প্রত্যাশিত ভাবে। এখনও তা ভেবে অবাক হয়ে যাই। হঠাৎ রাস্তার দিকের জানঙ্গ খুলে গেল হাসপাতালের দোতলায়। একটি মেয়ে উক্ষি মেরে স্বাস্তায় আমার দাড়িয়ে থাকা অবস্থা দেখলে। আমি চিনলাম, সে নির্মলা। নির্মলা কিন্তু আমাকে একবার দেখেই হাত দিয়ে এগিয়ে যেতে ইঞ্জিত করেই জানলা থেকে তথুনি পরে গেল।