পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী سOb) এ সময় নেপাল প্রামাণিক এসে হাজির হোল । বললে—আজ আমার ওখানে একটু চা খাবেন ডাক্তারবাবু। —তোমার ওখানে সেদিন চা তো খেয়েছি—আজ আমার ডাক্তারখানায় বরং তুমি আর আবদুল হামিদ চা খেও । গোবিন্দ দা বললে—আমি বুঝি বাদ যাবো ? —বাদ যাবে কেন ? চলো আমার সঙ্গে । —ভা হোলে আমার বাড়ীতে আপনি রাতে পায়ের ধুলো দেবেন বলুন ? —এখন সে কথা বলতে পারি নে। কত রাতে আসর ভাঙ্গবে, কে জানে ? —সমস্ত রাত দেখবেন ? —দেখি । ঠিক বলতে পারি নে। আবার মেয়েটি ঘুরে ঘুরে আমার সামনে এসেচে। কি জানি ওর মূখে কি আছে, আমি যতবার দেখচি, প্রত্যেকবারেই নতুন কিছু, অপূর্ব কিছু চোখে পড়ছে। অনেক মেয়ে দেখেচি জীবনে, কিন্তু অমন মুখ অমন চোখ আমি কারো দেখেচি বলে মনে তো হয় না। আমি এবারেও প্যালা দিলাম না | কিন্তু একবার ওর মুখের দিকে চাইতেই দেখি ও আমার মুখের দিকেই চেয়ে আছে। আমার অত্যন্ত আনন্দ হোল হঠাৎ ! অকারণ আনন্দ । ওই অপরিচিত বালিকাটি আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে, এতে আমার আনন্দের কারণ কি ? কে বলবে ? • সেই আনন্দের অদ্ভুত মুহূৰ্ত্তে আমার মনে হোল, আমি সব যেন বিলিয়ে দিতে পারি, যা কিছু আমার নিজস্ব আছে। সব কিছু দিয়ে দিতে পারি। সব কিছু। তুচ্ছ পয়সা, তুচ্ছ টাকা-কড়ি । & সেই মুহূৰ্ত্তে দুটাকা প্যাল হাত বাড়িয়ে দিতে গেলাম, মেয়েটি সাবলীল ভঙ্গিতে আমার সামনে এসে আমার হাত থেকে টাকা দুটি উঠিয়ে নিলে। আমার হাতের আঙ্গুলে ওর আঙ্গুল ঠেকে গেল। আমার মনে হোল ও ইচ্ছে করে আঙ্গুলে আঙ্গুল ঠেকালে । অনায়াসে টাকা দুটি তুলে নিতে পারতে সস্তপণে । R চোখ বুজে চুপ করে খানিকক্ষণ বসে রইলাম। হঠাৎ এই খেমটার আসর আমার কাছে অসাধারণ হয়ে উঠলো ! আমার সাধারণ অস্তিত্ব যেন লোপ পেয়ে গেল। আমি যুগযুগান্ত ধরে খেমটা নাচ দেখচি এখানে বসে। আমি অমর, বিজর, বিশ্বে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই। যুগযুগান্ত ধরে ওই মেয়েটি আমার সামনে এসে অমনি নাচচে । ওর অঙ্গুলির স্পর্শে আমার অতি সাধারণ একঘেয়ে, বৈচিত্র্যহীন জীবন ভূমার আনন্দ জাস্বাদ করল। অতি সাধারণ আমি অতি অসাধারণ হয়ে উঠলাম। আরও কি কি হোল, সেসব বুঝিয়ে বলবার সাধ্য নেই আমার। আমি গ্রাম্য ডাক্তার মানুষ, এ গ্রামে ও গ্রামে রোগী