পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

इ्रश् মাসখানেক কাটিয়া গেল । একদিন গদিতে গদাধর উপস্থিত আছেন, ভড়মশায় জিজ্ঞাসা করিলেন—ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের কাজ তো সব বিলি হয়ে গেল বাবু, আজ আমার শালার কাছে খবর পেয়েচি। আপনার কিছু হয়েচে ? —হয়েচে, তবে খুব বেশি নয়। হাজার-দুই টাকার কাজ পাওয়া গিয়েচে । —যাহয় তবু কিছু আসবে-এখন। গদাধর অন্যমনস্কভাবে বলিলেন—তা তো বটেই। ইতিপূর্বেই তিনি মনে-মনে হিসাব করিয়া দেখিয়াছেন—এ-কাজে তাহার বিশেষ কোনো লাভ হইবে না। পাঁচশত টাকা ঘুষ দিয়াও নিৰ্ম্মল ইহার বেশি কাজ যোগাড় করিতে পারে নাই—সে যত বলিয়াছিল, তাহার অৰ্দ্ধেক কাজও পাওয়া যায় নাই । নিৰ্ম্মল নিজেও সেজন্য খুব লজ্জিত। কথাটা অবশ্য গদাধর কাহাকেও বলেন নাই— নিৰ্ম্মল বন্ধুলোক, সে যদি চেষ্টা করিয়াও কাজ না পাইয়া থাকে তবে তাহার আর দোষ কি ? কিন্তু চতুর ভড়মহাশয় একদিন কথায়-কথায় জিজ্ঞাসা করিলেন—বাবু, একটা কথা বলবো,ভাবচি। যদি কিছু মনে না করেন তো বলি । —ইn, হ্যা, কি, বলুন ? —নিৰ্ম্মলবাবুকে কি কিছু টাকা দিয়েছিলেন, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের কাজের জন্যে ? • —না, কে বললে ? —আমি এমনি জিগ্যেস করচি বাবু। তাহলে কথাটা সত্যি নয় ? যাকৃ, তবে আর ও-কথার দরকার নেই। গদাধর চাহেন না, ইহা লইয়া নিৰ্ম্মলকে কেহ কিছু বলে। এ কথা শুনিলে অনেকে অনেক রকম কথা বলিবে, তিনি জানেন—স্বতরাং এ-বিষয়ে কোন উচ্চবাচ্য না করিয়া তিনি অন্য কথা পাড়িলেন। ভড়মহাশয়ও নিজের হিসাবের খাতায় মনোনিবেশ করিলেন। গদাধর অভাবগ্রস্ত লোক হইলে হয়তো এ-সব কথায় তাহার খটকা লাগিত। কিন্তু ঈশ্বর-ইচ্ছায় এই পল্লীগ্রামে বসিয়া তাহার মাসে চার-পাঁচশো টাকা আয়। পল্লীগ্রামের পক্ষে এ-আয় কম নয়। সংসারে খরচও এমন কিছু বেশি নয়—কিছু দান-ধ্যানও আছে। টাকার যে মূল্য অপরে দিয়া থাকে, গদাধরের কাছে টাকার হয়তো তত भूला नाहे ! অনঙ্গ একদিন বলিল—আচ্ছ, এবার আমাদের বাসষ্ঠীপূজাট করলে হয় না ? —গদাধর বলিলেন—তোমার ইচ্ছা হয় তো করি । —আমার কেন ? তোমার ইচ্ছে নেই ? —পূজা-আচ্ছা বিষয়ে তুমি বা বলে। আমি একটু অন্যরকম, জানোই তো।