পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দম্পতি $43 —পুজো হোক, আর কাঙালী-ভোজন করানো স্বাকৃ, কি বলো ? —তাতে আমার অমত নেই। —ভালো কারিগর এনে ঠাকুর গড়াও”কেষ্টনগরের কারিগর আনালে কেমন হয় ? —তুমি যা বলে ! বলেচি তে, ও-বিষয়ে আমি কোনো কথা বলবো না। গদাধর জানেন, স্ত্রীর ঝোক আছে এদিকে। লোককে খাওয়াইতে-মাখাইতে সে ভালোবালে। এ-পর্যন্ত র্তাহীদের বাড়ী অতিথি আসিয়া ফেরে নাই—যত বেলাতেই আস্থক না কেন, অনঙ্গ অনেক সময় মুখের ভাত অতিথিকে খাওয়াইয়া, মুড়ি খাইয়া একবেলা কাটাইয়াছে। কারণ অত বেলায় কে আবার রান্নার হাঙ্গামা করে ? এ-সব বিষয়ে গদাধর কোন কথা বলিতেন না। স্ত্রী যা করে, করুক । অনেকদিন আগের কথা । অনঙ্গ তখন ছেলেমানুষ—সবে নববধূ-রূপে এ-বাড়ীতে পা দিয়াছে। একদিন কোথা হইতে দুটি ভিক্ষুক আসিয়া অন্ন প্রার্থনা করিল। বেলা তখন দুই প্রহর উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে । গদাধরের মা বলিয়া পাঠাইলেন, এমন অসময়ে এখানে কিছু হইবে না । অনঙ্গ শাশুড়ীকে বলিল—ম, একটা কথা বলবো ? —কি বেীমা ? —আমার ভাত এখনও রয়েচে । মাথাটা বডড ধরেচে, আমি আর এবেল থাবো না, ভাবচি। ওই ভাত ওদেরকেই দিয়ে দিন না ? বধুর এ-কথায় শাশুড়ী কিন্তু বিরক্ত হইলেন। বলিলেন,—ও আবার কি কথা বৌমা ? মুখের ভাত ধ’রে দিতে হবে কোন জগন্নাথ-ক্ষেত্তরের পাণ্ড আমার এসেচেন! রঙ্গ দেখে আর বঁাচিনে । এবেলা না খাও, ওবেলা খাবে, ঢেকে রাখে, মিটে গেল । কিন্তু অনঙ্গ পুনরায় বিনীতভাবে বলিল—ত হোক না, আপনার পায়ে পড়ি। ওদের দিয়ে দিই। আমার খিদে নেই—সত্যি। - শাশুড়ী অগত্যা বধূর কথামত কাৰ্য্য করিলেন। গদাধর অনঙ্গকে এ-সব বিষয়ে কখনো বাধা দেন নাই, তবে অতিরিক্ত উৎসাহও কখনো দেন নাই—তাহাও ঠিক। নিজে তিনি ব্যবসায়ী লোক, অর্থাগম ছাড়া অন্ত-কিছু বড় বোঝেন না—জাগে-আগে পড়াশুনার বাতিক ছিল, কারণ গদিয়ান ব্যবসাদার হইলেও তিনি গোয়াড়ি কলেজ হইতে আই. এ. পাশ করিয়াছিলেন । সম্প্রতি টাকা উপার্জনের নেশায় জীবনের অন্য সব বাতিক ধাম-চাপা পড়িয়াছে। অনঙ্গ নিজেও বড়-ম্বরের মেয়ে । তাহার পিতা নফরচন্দ্র মিত্র একসময়ে রাধানগর পরগণার মধ্যে বড় তালুকদার ছিলেন। ভূসিমালের ব্যবসা করিয়াও বিস্তর পয়সা রোজগার করিয়াছিলেন–কিন্তু শেষের দিকে বড় ছেলেটি উচ্ছম্বল-প্রকৃতির হইয়া নানারকম বদখেয়ালে টাক মই করিতে থাকে, বৃদ্ধও মনের দুখে শয্যাগত হইয় পড়েন। ক্রমে একদিকের জন