পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Atbr বিভূতি-রচনাবলী —দেখলে তো ? —সে-বিষয় কোন ভূল নেই যে, পাঁচ হাজারের পক্ষে বাড়ী খুব সস্তা। –এর দরজা জানলা যা আছে, তারই দাম আজকালকার বাজারে দেড় হাজার টাকার ওপর—তা ছাড়া কড়ি বরগা, লোহার থাম, এসব ধ’রে••• —সবই বুঝলুম, কিন্তু এখানে কোনো গ্রাম নেই নিকটে, হাট নেই, বাজার নেই—এখানে বাস করবে কে ? এত ঘর-দোর যে, গোলকধাঁধার মত ঢুকলে সহজে বেরুনো যায় না— এখানে কি আমাদের মত ছোট গেরস্ত বাস করতে পারে । দাসদাসী চাই, দারোয়ান-সইস চাই, চারিদিকে জমজমাট চাই, তবে এখানে বাস করা চলে। নীলকুঠার সাহেবদের চলেছে —তা ব’লে কি আমার চলে, না, তোমার চলে ? নিৰ্ম্মল যেন কিঞ্চিৎ ক্ষুণ্ণ হইয়া বলিল—তাহ’লে—নেবে না ? —তুমিই বুঝে দেখ না। নিয়ে আমার স্ববিধে নেই। ভাড়াও চলবে না এখানে । —তবু একটা সম্পত্তি হয়ে থাকতো ! —নামেই সম্পত্তি। যে-সম্পত্তি থেকে কিছু আসবার সম্পর্ক নেই, সে আবার সম্পত্তি, রেখে দাও তুমি । কুঠীবাড়ী হইতে ফিরিবার পথে নিৰ্ম্মল এমন একটা কথা বলিল, যাহা গদাধরের খুব ভালো লাগিল। অনেক বাজে কথার মধ্যে নিৰ্ম্মল এবার এই একটা কাজের কথা বলিয়াছে বটে ! গদাধরের কি একট। কথার উত্তরে নিৰ্ম্মল বলিল—ব্যবসা তাহলে কলকাতায় উঠিয়ে নিয়ে চলো, সেখানে বাড়ী করে । ভাড়া হবে—থাকাও চলবে । কোন সময়ে কি কথায় কি হয়, কিছু বলা যায় না। নিৰ্ম্মল হয়তো কথাটা বিক্রপের ছলেই বলিল ; কিন্তু গদাধরের প্রাণে লাগিল কথাটা । গদাধর নিৰ্ম্মলের দিকে চাহিয়া রহিলেন । র্তাহার মনে হইল, মঙ্গলগঞ্জের কুঠীবাড়ী একগাদ। টাকা দিয়া কিনিতে আসিবার পূৰ্ব্বে র্তাহার এ-কথা বোঝা উচিত ছিল যে, এখানে টাকা ঢালা আর টাকা জলে ফেলা সমান । কিন্তু, কলকাতায় অনায়াসেই বাড়ী ও করা যায়---ব্যবসাও ফাদা যায়। এখানে এই ম্যালেরিয়া জরে বারোমাস কষ্ট পাওয়া—একট। আমোদ নেই, দুটো কথা বলবার লোক নেই --তার চেয়ে কলকাতায় যাওয়া ভালো । সেখানে ব্যবসা ফাদলে দু’পয়সা সত্যিকার রোজগার হয় । নিৰ্ম্মল বলিল—তাহ’লে কুঠীবাড়ী ছেড়ে দিলে তো ? —হঁ্যা, এ একেবারে নিশ্চয় । সারাপথ নিৰ্ম্মল ক্ষুণ্ণমনে ফিরিল। বাড়ী ফিরিলে অনঙ্গ আগ্রহের স্বরে বলিল—হঁ্যা গো, হলো ? কি-রকম দেখলে কুঠীবাড়ী ? -বাড়ী খুব ভালো। তবে সে কিনে কোনো লাভ নেই। মস্ত বাড়ী, কাছে লোক