পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দম্পতি ذ۹ دْ অনঙ্গ চুপ করিয়া শুইয়া পড়িল। - গদাধর কিন্তু শুইয়া-শুইয়া, –ফিল্ম-অভিনেত্রী শোভারাণীর ভাবনা ভাবিতেছিলেন, একথা বলিলে তাহার উপর ঘোর অবিচার করা হইবে। সত্যিই তিনি এক-আধবার ছাড়া তার কথা ভাবেন নাই। মেয়েদের কথা বেশিক্ষণ ধরিয়া ভাবিবার মত মন গদাধরের নয়! তিনি ভাবিতেছিলেন অন্য কথা । তিনি ভাবিতেছিলেন–জীবনট তার বৃথায় গেল ! মেকি লইয়া কাটাইলেন, আসল নারী কি বস্তু, তাহ কোনো দিন চিনিলেন না। আর একটি ছবি অন্ধকারে আধ-বুমের মধ্যেও বার-বার তার চোখের সম্মুখে ভাসিয়া উঠিতেছিল--- মির্ধ্যাতিতা স্বন্দরী বধু কমলা শ্বশুরবাড়ী হইতে বিতাড়িত হইয়া থরথর-কম্পিত দেহে পুকুরপাড়ে একদৃষ্টে স্বামীর ঘরের জানালার দিকে চাহিয়া আছে।-- চার দিন-দুই পরে গদাধরকে দেশের আড়তের কাজে যাইতে হইবে, ভড়মহাশয়ও সঙ্গে যাইবেন। অনঙ্গ স্বামীকে বলিল, সেও সঙ্গে যাইবে । গদাধর বলিলেন, চলো, ভালো কথাই তো। ছেলেরাও যাবে—গিয়ে স্কুল কামাই হবে, উপায় নাই। তোমায় কিন্তু ছেলেদের নিয়ে একলা থাকতে হবে ক'দিন। পারবে তো ? —কেন, তুমি কোথায় থাকবে ? —আমি যাচ্ছি মোকামে পাটের সন্ধানে। নারানপুর, আশুগঞ্জ, ঝিকরগাছা—এসব জায়গা ঘুরতে হবে। পাচশো গাট সাদা পাট অর্ডার দিয়েছে ডগলাস জুট মিল। এদিকে মাল নেই বাজারে—যা আছে, দূরে পোষাচ্ছে না,—আমি দেখিগে যাই এখন মোকামেমোকামে ঘুরে । মাথায় এখন আগুন জলছে, বাড়ী বসে থাকবার সময় আছে ? —বাড়ীতে মোটে আসবে না ? —সেই মঙ্গলবারের দিকে যদি আসা ঘটে—তার আগে নয়। অনঙ্গ যাইতে চাহিল না। শুধু ছেলেদের লইয়া একা সে দেশের বাড়ীতে গিয়া কি করিবে ? স্বামী থাকিলে ভালো লাগিত। স্বামীকে ছাড়িয়া থাকা তার অভ্যাস নাই— বিবাহ হইয়া পৰ্য্যস্ত কেহ কাহাকেও ছাড়িয়া থাকে নাই—একা থাকিতে অনঙ্গর মন হু-হু করে। ছেলেদের লইয়া মনের শূন্যতা পূর্ণ হইতে চায় না। ভড়মহাশয়কে লইয়া গদাধর চলিয়া গেলেন। বিভিন্ন মোকামে ঘুরিয়া সমস্ত পাটের যোগাড় করিতে সারাদিন লাগিয়া গেল। ফিরিবার পথে একবার গ্রামের বাড়ীতে গেলেন। ব্যবসায়-সংক্রাস্ত কিছু খাতাপত্র এখানে পূবের ম্বরের আলমারীতে ছিল । ক-মাস দেশছাড়া—ইহার মধ্যেই বাড়ীর উঠানে চিড়চিড়ে ও আমরুল গাছের জঙ্গল বাধিয়া গিয়াছে, ছাদের-কানিলে বনমূলার চারা দেখা দিয়াছে, ঘরের মধ্যে চামচিকার দল বালা বাধিয়াছে । ’