পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

》br● বিভূতি-রচনাবলী গদাধর চুপ করিয়া রছিলেন, আর কিছু বলা ভদ্রতা-সঙ্গত হইবে না হয়তো। জোর করিয়া কাহাকেও টাকা গছাইতে আসেন নাই তিনি। শোভা বলিল—কিছু মনে করেন নি তো ? —আজ্ঞে না, এর মধ্যে মনে করার কি আছে ? তবে••• —শচীনবাবুকে কিছু বলবার থাকে তো বলুন—স্টডিওতে দেখা হবে। —আমি এখানে এসেছিলুম এই কথাই বলবেন, তাছাড়া আর কি ! তাহলে আমি উঠি আজ । নমস্কার। গদাধর সিড়ি দিয়া নামিবার সময়, এবারও শোভা সিড়ির মুখে আসিয়া দাড়াইল । দরজা দিয়া বাহির হইবার সময় গদাধর দৈবাৎ একবার উপরের দিকে চাহিতেই শোভার সঙ্গে চোখাচোথি হইয়া গেল। গদাধর ভদ্রলোক, লজ্জিত হইলেন। অমনভাবে চাওয়া উচিত হয় নাই। কি উনি মনে করিলেন ? মেয়েটি অদ্ভূত ! কাল বলিয়া দিল টাকা আনিতে, অথচ আজ কিছুতেই লইতে চাহিল না । টাকা এভাবে কে ফিরাইয়া দেম আজকালকার বাজারে ? বিশেষ তিনি যখন যাচিয়াই দিতে গিয়াছিলেন ! সেদিন সারাদিন আড়তের কাজকর্মের ফঁাকে মেয়েটির মুখ কিছুতেই মন হইতে দূর করিতে পারিলেন না। সেই সদ্যস্নাত মূৰ্ত্তি, হাসি-হালি সুন্দর মুখ, দয়ার্ড ডাগর চোখ ছটি ! ছবির সেই বধু—কমলা ! বৈকালে চা ও লুচি খাইতে দিয়া অনঙ্গ বলিল—ই্যা গো, নিৰ্ম্মল ঠাকুরপো কোথায় ? —কেন ? কি হয়েছে বলে তো ? —স্বধা আমায় একখানা চিঠি লিখেচে—তাতে সে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েচে, লিখেচে, নিৰ্ম্মল-ঠাকুরপোর কোনো পাত্তা নেই—এতদিন দেশ থেকে এসেচে. —কি ক'রে বলবো, বলো ? ওসব কথার কি উত্তর দেবো ? সে তো আমায় বলে যায়নি ? স্বামীর বিরক্তির স্বর অনঙ্গ লক্ষ্য করিল। আজকাল যেন কি হইয়াছে, কথা বলিলে সব সময় রাগ-রাগ ভাব ! কলিকাতায় আসিয়৷ এই কিছুদিন হইল এরূপ হইয়াছে স্বামীর। আগে সে কখনো এমন দেখে নাই। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয় নরম-স্বরে সে জিজ্ঞাসা করিল—আজ রাত্রে কি খাবে ? গদাধর স্পষ্টই বিরক্ত হইলেন। এসব জাতীয় মেয়েদের মুখে অন্ত কোন কথা নাই— কেবল খাওয়া আর খাওয়া ! কি কথাই-বা জানা আছে যে বলিবে ? উত্তর দিলেন—সে হলো রাতের কথা—যা হয় হবে-এখন, তা নিয়ে এখন মাথাব্যথা কিসের ? - ... অনঙ্গ এবার রাগ করিল ; বলিল—সব-তাতেই অমন খিচিয়ে ওঠে। কেন আজকাল, বলে তো ? মিষ্টি কথায় উত্তর দিতে ভুলে গেলে নাকি ? এমন তো ছিলে না দেশে ! কি হয়েচে আজকাল তোমার ?