পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দম্পতি কুমার-বাহাদুর ৰেশ স্থপুরুষ, তরুণবয়স্ক, সাহেৰি পোষাকপরা, কেতাকায়দাছুরন্ত লাহেবিয়ানাকে যতদূর নকল করা সম্ভব একজন অৰ্দ্ধশিক্ষিত দেশী লোকের পক্ষে—তাহার ত্রুটি তিনি রাখেন নাই। অম্বথের কথা শোভার মুখ হইতে বাহির হইবামাত্র তিনি তটস্থ হইয়া বলিলেন—আপনার অস্বথ হয়েছে, মিল মিত্র ? গাড়ীতে ক'রে যেতে পারবেন না ? শোভা বিরক্তির স্বরে বলিল—আজ্ঞে না, মাপ করবেন । শচীন দলবল লইয়া অগত্যা বিদায় লইল । দিন-দুই পরে শোভা নিজের স্টুডিওতে হঠাৎ গদাধর ও রেখাকে দেখিয়া অবাক হইয়। গেল। প্রথমে তাহার মনে হইল, তাহারই জন্য উহারা আসিয়াছে। শেষে দেখিল, তাহা নয়, অন্য কি-একটা কাজে আসিয়া থাকিবে-অন্য কোনো অভিনেতা বা অভিনেত্রীর কাছে। শোভা সেটে দাড়াইবার পূৰ্ব্বে সাজগোজ করিয়াছে, মাথায় মুকুট, হাতে সেকেলে তাড়, বালা, চূড়—বাহুতে নিমফল-কোলানো রাতার গিন্টি-করা বাজু-পৌরাণিক চিত্রের ব্যাপার। তবুও সে একজন ছোকরা চাকরকে বলিল—এই, ওই বাৰু আর মাইজিকে ডেকে নিয়ে আয় তো ! তাহার বুকের মধ্যে একটি অনুভূতি, যাহা শোভা কখনো অনুভব করে নাই পূৰ্ব্বে । রেখাকে গদাধরের সঙ্গে বেড়াইতে দেখিয়াই কি এরূপ হইল ? সম্ভব নয়। উহারা যাহা খুশি করিতে পারে, তাহার তাহাতে কিছুই আসে-যায় না। তবে লোকটির মধ্যে তেজ আছে, সাহস আছে—বেশির ভাগ পুরুষই তাহার কাছে আসিয়া কেমন যেন হইয়া যায় ; মেরুদণ্ডবিহীন মোমের পুতুলদের ছদও নাচানো যাইতে পারে, কিন্তু তাহাতে আনন্দ নাই, জয়ের গৰ্ব্ব সেখানে বড়ই ক্ষণস্থায়ী। শাণিত ছোরার আগার সাহায্যে কচুগাছের ডগা কাটা ! ছোরার অপমান হয় না তাতে ? গদাধরবাবুর কাছে গিয়া চাকরটি কি বলিল, গদাধরকে আঙুল দিয়া তাহার দিকে দেখাইল চাকরটা—এ পর্য্যন্ত শোভা দেখিল । তাহার বুকের মধ্যে ভীষণ টিপ-টিপ শুরু হইল অকস্মাৎ—বুকের রক্ত যেন, চলুকাইয়া উপরের দিকে উঠিতেছে। ঠিক সেই সময় ডাক পড়িল—গদাধরের সঙ্গে শোভার আর দেখা হইল না সেদিন । মাস পাচ ছয় কাটিল। পুনরায় পূজা আসিল, চলিয়াও গেল। কাত্তিক মাসের শেষের দিকে একদিন শচীন কথায়-কথায় বলিল—শুনচো, গদাধর আমাদের বড় বিপদে পড়েচে । শোভা জিজ্ঞাসা করিল—কি হয়েচে ? —ওর সেই ছবি অৰ্দ্ধেক হয়ে আর হলো না—কতকগুলো টাকা নষ্ট হলো। এবার একেবারে মারা পড়বে | —কেন কি হলো ? –রেখা ঝগড়া ক’রে ছেড়ে দিয়েচে । তার সঙ্গে নাকি কোনো লেখাপড়া ছিল না