পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১২ বিভূতি-রচনাবলী কি ভাবে থাকেন, ভড়মশায় ৰ অনঙ্গ জিজ্ঞাসা করিতে সাহস করে নাই। এবার কিন্তু ভড়মশায় শক্ত হইয়া বলিলেন–বাৰু, এ টাকা বৌ-ঠাকরুণের গহনা-বেচা টাকা। এ থেকে আপনাকে দিতে গেলে, তার সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। র্তার হুকুম ভিন্ন দিতে পারি নে। গদাধর ভ্র কুঞ্চিত করিয়া বলিলেন—আড়ত আমার নামে, আপনার বৌ-ঠাকরুণের নামে নয় । আমার আড়তে অপরের টাকা খাটে কোন হিসেবে ? go —সে কথাটা বাৰু আপনি গিয়ে তাকে বলুন-আমি এর জবাব দিতে পারবে না। —আপনি টাকা দিয়ে দিন, আমার বডড দরকার, পাওনাদারে ছিড়ে থাচে । আমি এখন যাই, কাল সকালে আবার আসবো । ভড়মশায় অনঙ্গকে গিয়া কথাটা জানাইলেন। অনঙ্গ টাকা দিতে রাজী হইল না। তাহার ও তাহার ছেলেদের দশা কি হইবে, সে-কথা স্বামী কি একবার ভাবিয়া দেখিয়াছেন ? ওই দেড় হাজার টাকা ভরসা। বাড়ী ভাড়া দিতে হয় না—তাই এক-রকমে সংসার চলিবে কিছুদিন ওই টাকায় । পরদিন অনঙ্গ দুপুরে কলভলায় মাছ ধুইতেছে, হঠাৎ স্বামীকে বাড়ী ঢুকিতে দেখিয়া সে বিস্থিত হইল। গদাধর কাছে আসিয়া বলিলেন—কেমন আছো ? অনঙ্গ একদৃষ্টে স্বামীর মুখের দিকে চাহিয়াছিল। অনেকদিন দেখে নাই—প্রায় পনেরো-ষোলো দিন। স্বামীর স্বাস্থ্য ভালো হইয়াছে, চেহারায় গেয়ো-ভাবটা অনেকদিন হইতেই দূর হইয়াছিল—বেশ চমৎকার চেহারা ফুটিয়াছে। তবুও অভিমানের নীরসভা কণ্ঠে আনিয়া সে বলিল—ভালো থাকি আর না থাকি, তোমার তাতে কি ? দেখতে এসেছিলে একদিন, মরে গিয়েছে বাড়ীম্বন্ধ, না বেঁচে আছে ? —তুমি আজকাল বড় রাগ করো। আমি কাজ নিয়ে বড় ব্যস্ত আছি, স্টুডিওতে খাই, স্টুডিওতেই শুই—তাই সময় পাই নে—কিন্তু ভড়মশায়ের কাছে রোজই খবর পাচ্চি ফোনে —রোজ ফোন করি গণিতে । 總 —বেশ করে । না করলেই-বা কি ক্ষতি ? —কার কথা বলছো—তোমার, না আমার ? - —দুজনেরই। যাক, এখন কি মনে ক’রে অসময়ে ? খাওয়া হয় নি, তা মুখ দেখেই বুঝতে পারচি। ঘরে গিয়ে বলে, আমি মাছ ক’টা ধুয়ে আসচি। একটু পরে অনঙ্গ ঘরে ঢুকিয়া দেখিল, স্বামী ছেলেদের লইয়া গল্প করিতেছেন। অনঙ্গ বলিল—চা খাবে নাকি ? এখনও রান্নার দেরি আছে কিন্তু । গদাধর ব্যস্ত হইয়া বলিলেন—আমার দেরি করলে চলবে না। চা বরং একটু ক’রে দাও—আর আমি এসেছিলাম যে জsে-•• অনঙ্গ বলিল—সে অামি শুনেচি। সে হবে না। —টাকা তুমি দেবে না অনঙ্গ ? লক্ষ্মীটি, বডড বিপদে পড়েচি। একটা মেশিনের কিস্তির টাকা কাল দিতে হবে, নইলে তারা মেশিন উঠিয়ে নিয়ে যাবে—স্টডিওর কাজ বন্ধ