পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮২ বিভূতি-রচনাবলী عن কানাইয়ের মা আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললে—আশীৰ্ব্বাদ কর দাদাঠাকুর, কানাই আমার বেঁচে থাকুক, সংসারে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে আচায় যেন। জান তে, যখন তিনি মারা গেল, কি কষ্ট করে মানুষ করেছি। কানাই তখন এক বছরের, বাচ্চা । কত কষ্ট করিছি ওর জন্তি । লোকের ধান সেদ্ধ করে, চিড়ে কুটে, বাসন মেজে তবে ওকে মানুষ করিছি। সেই কানাই আজ বিয়ে করে মোরে বাসায় এনেছে, ঘড়ি কিনেছে, কেদার কিনেছে, চা খাচ্ছে— ధౌ আমি গম্ভীর ভাবে বললাম—ঠিক ঠিক। তার আর কথা কি বল । এই সময় কানাই আমার জন্যে খাবার কিনে নিয়ে এসে ঘরে ঢুকল। কানাইয়ের বেী একটা রেকাবিতে গরম কুমড়োর ফুলুরি, রসগোল্লা ও নিমকি আমায় খেতে দিলে । বললে—খেয়ে দেখুন, কুমড়োর ফুলুরি এখন ভাজলাম। চা নিয়ে এসে কানাইয়ের মা বললে—এই পেয়ালাগুলো কানাই এবার কিনেছে। ভাল দাদাঠাকুর ? খুব ভাল। চমৎকার । কানাই সলজ্জ স্বরে মাকে বললে—তুমি যাও ওদিকে, পান নিয়ে এস কাকাবাবুর জন্তে । সে বেচারী জানে না, তার মা আগে কি বলেছে, বা এখন আরও কি বলবে । কানাইয়ের মা কিন্তু নাছোড়বান্দা । ওর বৌমাকে নিয়ে এসে হাজির করলে গান শোনাতে। হারমোনিয়ম নিয়ে এল । বললাম—এ হারমোনিয়ম কি কানাই কিনেছে নাকি ? কানাইয়ের মা বললে—না দাদাঠাকুর। বৌমা গান করে বলে পাশের বাসা থেকে আন । গান গাইলে কানাইয়ের বোঁ । মন্দ নয়, বেশ গান । আসবার সময় কানাইয়েব মা বললে—কেমন গান গায় আমার বৌমা ? —ভারি চমৎকার । অতি সুন্দর গান । কানাই বললে—তুমি যাও দিকি মা-ও দিকে যাও । /াকাবার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি পৌছে দিয়ে আসি । ওদের কাছে বিদায় নিয়ে চলে এলাম । কানাইয়ের মা আমার সঙ্গে গলির মোড় পর্য্যন্ত এল । সে বডড খুনী যে, আমি তাদের বাসায় এসেছি বা এখানে চা-খাবার খেয়েছি। আমাদের গ্রামে বসে কখনও এ ব্যাপার সম্ভব হত না । আরও খুশী এই যে, কানাই আজ এত বড় হয়েছে, এত উন্নতি করেছে । বার বার আমায় বলতে লাগল—যদি গায়ে যান দাদাঠাকুর, মোদের কথা বলবেন সবাইকে । আমি কতকাল গায়ে যাই নি । সেই আর বছর আষাঢ় মাসে বাসায় এইছি এক বছর হুতি ঢলল—বডড মনে পড়ে গায়ের কথা—মোদের উঠোনের গাছটার অতগুলো পেয়ারা, এবারে কে থাবে কি জানি ।