পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३४७ বিভূতি-রচনাবলী এসব কথা আমাকে শোনানোর দরকার কি ! বলেই ফেললাম কথাটা শেষে । —আপনার তো চাকরি করা উচিত ছিল ? —ওই যে বললাম, আই অ্যাম এ প্রিজনার ইন মাই ওন হোম— এ কথাটা বার বার বলে কেন ? কে তোকে বেঁধে রেখেছে দড়ি দিয়ে বাপু । আর তাহলে তুমি এখানেই বা আস কি করে ? যাক, ওসব কথায় আমার কোনই দরকার নেই। . চুপ করেই রইলাম । হঠাৎ সে বললে, হ্যা, আমার ইংরিজি কবিতাটি শুনুন— —বেশ, বেশ, আনন্দের সঙ্গে শুনব— –একটু বাইরের দিকে নির্জনে চলুন, এখানে আবার মেলা লোক রয়েছে। না থাকলেও জমে যাবে কবিতার আবৃত্তি শুনলে । লাইব্রেরির বা দিকে মাঠের মধ্যেকার একটা কৎবেল গাছ, তার পাশে বৈঁচি ঝোপ, তার পাশে একটা ডোবা —এই নির্জন জায়গাটাতে বৈঁচি ঝোপের আড়ালে সে আমায় নিয়ে গিয়ে হাত-পা নেড়ে আবৃত্তি করতে আরম্ভ করলে—‘ও মাই বিলভেড ইংল্যাণ্ড ? এই হল তার কবিতার প্রথম লাইন । বেশ চমৎকার আবৃত্তি করতে পারে। ইংরিজি কবিতাটিও মন্দ লেখে নি—তবে কি আর শেলি, শেকসপিয়ার, কীটস্ কিংবা ব্রাউনিঙের মত হবে ওর কবিতা ? না তরু দত্ত বা রবীন্দ্রনাথের মত হবে ? একজন বাঙালী যুবকের সাধারণ বুদ্ধিবিদ্যার পক্ষে মন্দ শুধু নয়—ভাল | আমার সত্যি আশ্চৰ্য্য লাগল । এর মধ্যে দেখছি জিনিস আছে । লাইব্রেরিতে স্কুলের ইংরিজি পড়ানোর মাস্টার ব্রজেনবাবু বসে ছিলেন, তাকে ডেকে ওর আবৃত্তি শোনালাম । তিনি বললেন, বা, বা, সত্যি খুব ভাল। আপনি কি করেন ? আমি বললাম, কিছুই করেন না । দিন না আপনাদের ইস্কুলে একট চাকরি । যুবকটিও হাত কচলে বিনীত ভাবে বললে, দিন না, তা হলে তো খুব ভাল হয়। ব্ৰজেনবাবু অপ্রতিভ ভাবে বললেন, আমি আপনার মতৃলোকের চাকরির কি ব্যবস্থা করব বলুন—হেড মাস্টারকে বরং বলুন । বেশ ইংরেজি জানেন যুবক উৎফুল্ল মুখে বললে, কলেজে আমাদের ক্লাসে আমার নাম ছিল ‘দি পোয়েট । খামন্বন্দর রায়কে চেনেন তো ? চেনেন না ? ও আমার ক্লাস-মেট ৷ ‘ফিলজফিতে অনার্স ছিল ওর । কলেজ লাইব্রেরিতে বসে দুজনে একসঙ্গে পড়াশুনা করতাম। বিলেত যাওয়ার কত শখ ছিল । ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে বসে দুজনে এই রকম বই পড়ব কল্পনা করতাম। বললাম যে আপনাকে, কলেজের দিনগুলো, নাইনটিন থাটিনাইন টু নাইনটিন ফটিটু—এই গিয়েছে বেস্ট ইয়ার্স অৰ মাই লাইফ—আর সেসব দিন ফিরবে না— আমি কৌতুহল অনুভব করছিলাম ওর কথায় হাত-পা নেড়ে বেশ কথা বলে । বলবার ক্ষমতা আছে। এসব অজ পাড়াগায়ে বলে ওই সব অতীত দিনের গল্পের সময় যে ছবিটা ওর মনে জাগে, ও মুখ পায় তাতে। স্বতরাং বলতে ভালবালে সেসব গৌরবোজ্জল দিনগুলির