পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১২ বিস্তৃতি রচনাবলী আমরা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলতাম, ওই তো সাহেব বসে আছে— বাইরের ঘরে সাহেব থাকত । কৃষাণের জন্যে একটা ছোট তক্তপোশ পাতা ছিল সেখানে অনেক দিন ; সেইখানে পুরনো তোশক ও থলের চট, একখানা পুরনো চাদর ও একটা বালিশ, একটা ছোট মশারি দিয়ে সাহেবকে শোবার ব্যবস্থা করে দিলেন বাবা । একখানা লোহার কলাই-করা সানকি আর একটা কলাইকর গেলাস, এই আমরা দিয়েছিলাম ওকে, তাতে সে ভাত থেত । সাহেবের নাম ছিল থর্নটন। আমার মুখে ভাল উচ্চারণ হত না, আমি বলতাম থর্নটন কাকা । কেউ বলত ঠনঠন সাহেব । আমাদের যা রান্না হত, থর্নটন কাকাকে তাই দেওয়া হত। দিদি এসে মুখে কাপড় দিয়ে হাসতে হাসতে বললে, থনটন কাকা খেতে জানে না, মাছের ঝোল আর তালের গুড় একসঙ্গে মেখেছে ! ওর কথা শুনে আমি গেলাম দেখতে । সে এক কাণ্ডই করেছে সাহেব । ডাল খায় নি, অথচ মাছের ঝোলে তালের গুড় দিয়ে মেখে চুমুক দিচ্ছে। বললেও, ইট ইজ সো হট । কথাটা আমি স্পষ্ট বুঝলাম ; ফার্ট বুক পড়ি, মানে করলাম, ইহা হয় এত গরম ! কিন্তু গরম—তাই কি ? তালের গুড় মাখলে কি গরম কমবে ? পরে বাবা বলেছিলেন ওর মানে, খুব ঝাল | মাছের ঝোল খুব ঝাল হয়েছিল । হয়ই আমাদের বাড়ীতে । বাবা বলেছিলেন সাহেবের তরকারিতে ঝাল কম দিতে । আমি আর দিদি ওকে খেতে শেখালাম–কিসের পর কি খেতে হয়, কোন জিনিসটা কি ভাবে মাখতে হয়। থনটন কাকা আমাদের, বিশেষত দিদিকে, বড় ভালবাসতে শুরু করলে । ক্রমে একটু আধটু বাংলাও শিখে ফেললে আমাদের কাছে। দিদিকে বলত অদ্ভূত বাকী স্বরে—বীণ, ভাল ডে৪ বাট ডেও নে—ডাল ডেও। দিদি হাসতে হাসতে বলত—ভাত দেব না কাক ? —নো । বাট ডেও নো । ভাল ডেও । —বেগুন ভাজা দেব ? এই যে—এই দেব ? -८न ! ধনটন কাক বুড়ে লোক, পরে আমরা আবিষ্কার করলাম। সাহেব লোকের বয়স প্রথমটা জামরা বুঝতে পারি নি । আমাদের সে তাসের খেলা শেখাত বাদলার দিনে বসে বসে। আমাকে ইংরেজি পড়াত বটে, তবে ভর থকা বাকা জড়ানো উচ্চারণ আমি প্রথমটা বুঝতেই পারতাম না । একদিন বাবাকে বললাম—বাব, সাহেবকাকা ইংরেজি জানেন না। —সে কি !