পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ծօ 9 বিভূতি-রচনাবলী গ্রামের মধ্যে ঢুকে প্রথমেই বাড়ী । একজন বৃদ্ধ জনকতক লোকের সঙ্গে দাড়িয়ে গল্প করছে —‘এই ৩ো পথ ছিল রে বাপু মাছ তরকারি সব বাড়ী বসে কেনো। বাজারে কি যেতে হত । বেগুন সব এমন এমন । আর সস্তাও কি ! মনে আছে তখন বিষ্ণুপুরের হাট বিষ্ণুপুরেই ছিল, রাজগঞ্জে উঠে আসে নি। একবার—’•••পুরনো পোড়ো বাড়ীটার একটা দেওয়াল তখনও দাড়িয়ে আছে, স্তুপাকৃতি ইটকাঠের মধ্যে নিমগাছ আর যগডুমুর চারা গজিয়ে উঠেছে। দেওয়ালের গায়ে দোতলার সমান উচুতে একটা কুলুঙ্গি। কে জানে, সত্তর বছর আগে হয়তে এই জীর্ণ পরিত্যক্ত আবাসে কোন নববধূ তার মেথিতে ভেজানো সুগন্ধ নারকেল তেলের পাথরবাটি ঐ কুলুঙ্গিতে রেখে দিত। ঐ ঘরের মধ্যেই কত বছর আগেকারের তাদের ফুলশয্যার প্রথম প্রণয়ের মধুরাত্রি কেটে গিয়েছে। কোথায় আজ আশি বৎসর আগেকার সে সব প্রথম প্রণয়-হৰ্ষাকুলা তরুণী নববধু? কোথায় তাদের প্রিয়জনেরা ? কোন দূর অতীতে কতদিন হল ছায়ার মত মিশে গিয়েছে, কে আজ তাদের সন্ধান দিতে পারে । একটা বাড়ীর উঠানে একটা বিলাতী আমরা-গাছতলায় একদল পাড়ার ছেলে খেলা করছে, নতুন লোক দেখে তারা খেলা ফেলে আমার দিকে সকৌতুকে চেয়ে রইল। অন্ধকার ঝুপসী বঁাশ-বাগানের মধ্যে ডোবার ধারে বসে একজন পল্লীবধু বাসন মাজছে—তাদের তরুণ জীবনও সেই বঁাশ-বাগানের মধ্যেকার আসন্ন শীতসন্ধ্যার মতই ঘুলঘুলি অন্ধকার । সামনের এক বাড়ীর দোর খুলে আর একটি বধু এ-হাতে একটি ঘড়া ও-হাতে আর একটি নিয়ে বার হয়েই হঠাৎ আমায় সামনে দেখে ঘড়াস্বদ্ধ ডান হাতটা তাড়াতাড়ি খানিকটা উঠিয়ে এবং মাথাটা খানিকটা মুইয়ে হাতের কাছে নিয়ে গিয়ে ঘোমটা টেনে দিলেন । একটি বাড়ীর মধ্যে উচু মেয়েলি কণ্ঠের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে—‘আমি জানি নে খুড়িম, মাঝের ঘরেই তো ছিল, কে নিয়েছে আমি জানি নে '–জন চার-পাচ ছেলে-মেয়ে দাড়িয়ে—তাদের মধ্যে একজন একটা কঞ্চি হাতে উঠানের একটা কুলগাছ থেকে র্কাচা সবুজ কুল পাড়ছে। —ঐ যে রে তোর বা হাতের ডালে—আর একটু উচুতে—এ যে, একটু একটু রাঙা হয়েছে, না ? হ্যা হ্যা’—বলা বাহুল্য পৌষমাসের প্রথম, রাঙা হওয়া দূরের কথা কুলের মধ্যে আঁঠিও হয় নি। পথের বাক ফিরে একটা বেশ বড় বাড়ী—লোহার বড় বড় গজালমারা প্রকাও সিংদরজা, বালির কাজ খসে পড়ছে, পাচিলের মাথায় বনমুলোর গাছ গজিয়েছে s বাড়ীর সামনে পেরেকে ঝুলনো একটী রং-করা ডাকবাক্স, Next Clearence-এর নীচে Thursday-g cris FitGT I পাড়া পার হয়ে একটা বঁাশ-বাগান পড়ল। তার মধ্যে দিয়ে রাস্তা। মচ মচ করে শুকনো বঁাশপাতার রাশ ও বাশের খোলা জুতোর নীচে ভেঙে যেতে লাগল। পাশে একটা ফাক জায়গায় বুনো গাছপালার-লতা-ঝোপের ঘন সমাবেশ, কি বিরাট প্রাচুর্য্য ! জীবনের কি প্রবল উজুলি! সমস্ত ঝোপটার মাথা জুড়ে সাদা সাদা তুলোর মতো রাধালতার ফুল ফুটে রয়েছে। সমস্ত ঝোপটির কি সম্মিলিত সুগন্ধ, কি স্নিগ্ধ স্পর্শ! এইবার গ্রামের শেষে কাওরাপাড়া ।