পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যোতিরিঙ্গণ ée ۹ ছোট ছোট্ট চালাঘর, একটার উঠানে শুকনো পাতালত জেলে অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে আগুন পোয়াচ্ছে । বাড়ীর পিছনে খেজুর গাছে ভাড় ঝুলনে । বাড়ীর মধ্যে সীম গাছ, লাল গাছের মাচা । তিন-চারটে কুকুর জুতোর শঝে ছুটে এসে নতুন লোক দেখে বেজায় ঘেউ-ঘেউ আওয়াজ শুরু করে দিলে । সরু পথ বেয়ে আবার গ্রামের পিছনের মাঠে এসে পড়লুম। মুশকিল পিসিমা সকালে উঠে আমায় বললেন—যা পয়সা নিয়ে গিয়ে দেখে আয় দিকি বনগার খোয়াড়ে । যদি সেখানে গরুটা গিয়ে থাকে,—দেখেই এস না কেন বাপু— মা বললেন—ওকে পাঠানে। আর না পাঠানো ছ-ই সমান । ও কি করবে সেখানে গিয়ে ? ও পারবে না। ওর বুদ্ধি-মুদ্ধি নেই, কখনও ঘরের বার হয় নি । এ কথায় আমি চটে গেলাম মনে মনে । বললাম—তুমি পাঠিয়েই দেখ না কেন, পারি কি পারি নে। আমি বনগা গিয়ে আর গরু দেখে আসতে পারি নে? খুব পারি। বনগী আমি কখনও যাই নি । শুনেছি সে মস্ত বড় শহর-জায়গা । কত গাড়ী ঘোড়া, লোকজন, রেলগাড়ী—আরও কত কি দেখার জিনিস সেখানে। আমাদের গ্রামের কিছু দূরে যে পাকা রাস্ত আছে, সেই রাস্তা ধরে পূর্বদিকে তিনক্রোশ রাস্ত নাকি যেতে হয়। ওখানে বড় স্কুল আছে । আমাদের গায়ের গিরীন ডাক্তারের ছেলে স্বরেন সেখানে স্কুলবোর্ডিঙে থেকে পড়ে । মাঝে মাঝে ফিরে এসে বনগা শহরের কত আশ্চৰ্য্য আশ্চৰ্য্য গল্প করে শুনেছি। সেখানে যাবার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মা কিছুতেই আমাকে সেখানে যেতে দেবে না। গেলে নাকি আমি গাড়ীঘোড়া চাপা পড়ব । গাড়ীঘোড়া কি লোকের দিকে তেড়ে ছুটে আসে ? সাবধান হয়ে বেড়ালেও কি লোকে গাড়ীঘোড়া চাপা পড়ে ? অনেক বুঝিয়ে মাকে রাজী করাই । আট আনা পয়সা দিয়ে মা বললেন—এটা কাপড়ের খুটে আলাদা করে বেঁধে নে—তুই আবার যে রকম ছেলে, হারিয়ে ফেলবি কোথায়। আর তুই কিছু কিনে খাস, এই নে চার পয়সা । আমি বললাম—আরও দুটো পয়সা দাও। —আবার কি হবে ? —দাও না। খেলনা কি নতুন জিনিস কিনে আনব ! —যা নিয়ে । ভাদ্রমাস । চারিদিকে সবুজ আমন ধানের ক্ষেতে ক্ষেতে ঢেউ খেলছে। বন-ধুধুলের বড় হলদে মূল ঝোপে ঝোপে ফুটে রয়েছে। শুকনো কাঠ ভেঙে পড়েছে পাকা রাস্তার উপর