পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\0%e বিভূতি-রচনাবলী আমি আরও এগিয়ে গিয়ে বাজারে পড়লাম। কি লোকজনের ভিড় ! ঝুমঝুমি বাজিয়ে এক জায়গায় কি বিক্রি হচ্ছে। চানাচুর । সে আবার কি জিনিস? একটা লোক ঝুমঝুমি বাজিয়ে বলছে—চীনা-চুর, মজার চানাচুর গরম। যে খাবে ও পস্তাবে, যে না খাবে ও ভি পস্তাবে—মজার চানাচুর গরম! কি ও জিনিসটা ? খেয়ে দেখব ? আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম—কত দাম ? কি জিনিস? o —চানাচুর গরম! —এক পয়সার দেবে ? —কাহে নেহি দেবে বাবা ? এই লাও ৷ লোকটা একটা শালপাতার ছোট ঠোঙা আমার হাতে দিলে। আমি ঠোঙা খুলে ভেতরের জিনিস দেখতে গেলাম তাড়াতাড়ি । ও মা ! ছোলা ভাজা আর কি কি ভাজা । কেমন চমৎকার মসল ! একগাল খেয়ে দেখলাম—ও মা, কি চমৎকার। আর এক পয়সার চানাচুর নিলাম, বাড়ী নিয়ে যাব ছোট ভাইটার জন্তে । একজায়গায় একটা মুচি জুতো সেলাই করছিল । তার সামনে একটা লোহার তিনপায়৷ জিনিস, তার ওপর রেখে জুতোয় ঠুকছিল পেরেক । আমি অনেকক্ষণ দাড়িয়ে দেখলাম। সেখানে কি সব বড় বড় দোকান। কত রকম জিনিস সাজানো । একটা দোকানে নানারকম ফল বিক্রি হচ্ছে, সেই দিকে গিয়ে দেখি, বললে কেউ বিশ্বাস করবে না আমাদের গায়ে—কি বিক্রি হচ্ছে বল তো ? অাম ! কেউ কখনও শুনেছে ভাদ্র মাসে আমের কথা ! আষাঢ়ের প্রথমে দু-একটা গাছে আম থাকতে দেখা যায় আমাদের ওদিকে। আম এখনও বিক্রি হয়, পাকা আম ? আমি সেই ফলের দোকানের সামনে দাড়িয়ে আমগুলো কতক্ষণ ধরে দেখলাম । কত শিল-নোড়া একটা দোকানে । এত শিল-নোড়া কেনে কে ? কত রকম টোপর বিক্রি হচ্ছে একটা দোকানে । টোপর তো মালীরা করে দেয় দেখেছি, দোকানে বিক্রি হয় জানতাম না। পেছন দিকে একটা শব্দ শুনে চেয়ে দেখি—এর নাম কী গাড়ী ? বা রে । মামুষে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ তার ভেতরে লোক বসে । একজনকে বললাম—ওটা কী গাড়ী ? —রিকৃশা গাড়ী বলে ওকে খোকা । —রিকশা গাড়ী ? —হঁ্যা ! দেখ নি কখনও ? তোমার বাড়ি কোথায় ? —গোপালনগর। পাড়া গ৷ ৷ –তাই দেখ নি। এ গাড়ী এখানেই নতুন এসেছে। একখানা মাত্র দেখছি। আরও এগিয়ে গিয়ে দেখি একটা ফাকা জায়গায় ভিড় করে গোল হয়ে লোক দাড়িয়ে আছে। ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। কি ব্যাপার? * দেখি একটা লোক ফৰ্ড খেলছে। চার পয়সা দিলে চার আনা ফেরত দিচ্ছে জিতলে ।