পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী eՉծ কেশব গাঙ্গুলী জানেন, এখানে যা খাবেন তার নগদ দাম দিতে হবে এখুনি। আর একবার এ রকম হয়েছিল, তাকে খাতির করছে ভেবে চপ, কাটলেট, ডিম যা নিয়ে আসে, তাই খান । শেষে হাসিমুখে আপ্যায়িত করে বিদায় নেবার জন্যে টেবিলের কাছে যেতেই শান্তি হাসিমুখে বললে—এক টাকা সাড়ে তেরো আলা— আজ আর সে ভুল করবেন না । হাতে পয়সা কম । চায়ের ছপয়সা দাম দিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলেন । শান্তিকে বললেন, তোমার বাব ভালো ? তোমার দাদু বাড়ীতে আছেন ? —আজ্ঞে হঁ্যা । —একবার যাবো দেখা করতে ? —যান না । এখন বৈঠকখানাতেই বসে আছেন। গক্তারবাবু আছেন, আর শশী কাক আছেন । —আচ্ছা আসি । কেশব গাঙ্গুলীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। ব্যবসাদারের চক্ষুলজা নেই। সংসার বড় কঠিন জায়গা ? তবুও রমাপতির বাড়ীতেই গেলেন । রমাপতি কুণ্ডু তার সমবয়সী । তাকে দেখে খুশী হল। যত্ন করলে খুব । রাত্রে লুচি, তরকারী, মিষ্টি খাওয়ালে। ভাল গদিপাত, নেটের মশারি খাটানো বিছানায় শুয়ে কেশব মশারির চালের দিকে চেয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন । পরের এমন সুন্দর বিছানাতে কদিন তিনি শোবেন ? তার আশ্রয়স্থল তো বৃক্ষতল । এরা না হয় আজ রাত্রেই খাতির করে আশ্রয় দিয়েছে । কেন অপরের অদৃষ্টে এত মুখ থাকে, আর তার অদৃষ্টে এমন ধারা ? এই তো রমাপতিকে দেখলেন, তার নাতনীরা কত যত্নে বাতাস করতে লাগলো খাওয়ার সময়ে । খাওয়ার পর এক বড় নাতনী আমলা না কি রোজ তেল মালিশ করে দাদুর পায়ে । পুত্রবধুর ‘বাবা বলতে অজ্ঞান। সেটা হয়তো পয়সাওয়ালা বলে, রমাপতির নামেই ব্যবসা, লক্ষপতি লোক । আজ র্তার হাতে যদি পয়সা থাকতো, তবে কি আর মেয়েট তাকে অমন কথা বলতে সাহস করতো ? তিনি নিঃস্ব, কাজেই তাকে হেনস্থা করে । পয়সা এমন জিনিস । কত কি ভাবতে ভাবতে কেশবের ঘুম এল । একটা বড্ড ব্যথার জায়গা খচ খচ করে। যখন তিনি চলে যাচ্ছেন বাড়ী থেকে বেরিয়ে, তখন মেয়েরা কেন দৌড়ে এসে পথ আটকালে না ? স্ত্রী কেন ছুটে এল না ? সব মিথ্যে। সব ভূয়ে। সব স্বার্থের দাস । দয়া, মায়া, স্নেহ, মমতা পৃথিবীতে নেই। রমাপতি কুণ্ডু লক্ষপতি, তাই আজ নাতি-নাতনী তার পায়ে তেল মালিশ করে, পুত্রবধুরা দুধের বাটি মুখে ধরে। যদি তার টাকা থাকতো, তার আদরও ওই রকমই হত । সকালে উঠে রমাপতি কুণ্ডু বললে—গঙ্গাস্বান করবেন না গাঙ্গুলীমশায় ? গঙ্গহীন দেশে