পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী |eశ్రీవీ মধ্যে একজন শোঁখীন লোক বলে গণ্য হতেন। বড় মামা হোলেন আমার আপন মামাদের জ্ঞাতি ভাই। যখন তাদের নিজেদের সরিকি পৈতৃক বাড়ীর অংশ একবার বৃষ্টির সময় এসে ভেঙ্গে পড়ে, তখন তার আপন জ্যাঠামশাই হাততালি দিয়ে হেসেছিলেন। বড় মামা তখন বাইশ বছরের যুবক, পিতৃহীন, অবস্থাও খারাপ, ওই জ্যাঠামশাই তাদের পৃথক করে দিয়েছিলেন । ওদের অংশ ভেঙে পড়ে গেল, বেশ হয়েচে, এখন কিসে বাস করবে করুক, এই হল র্তার আটাত্তর বছর বয়স্ক জ্যাঠামশায়ের উল্লাসের কারণ। এদিনের কথা বড় মামার বডড মনে ছিল । তাই তিনি রেঙ্গুনে চাকুরি করতে করতে যা করে হোক টাকা জমিয়ে পাচ হাজার টাকা দিয়ে এই বাড়ী তৈরী করেন । এ বাড়ী যখন তৈরী হয়, তখন আমার মায়ের বিয়ে হয় নি—অত আগের কালের পাচ হাজার টাকা আজকালকার দিনে ষাট হাজার টাকার সমান । সেই বাড়ী ভূতের বাসা হয়ে পড়ে আছে আজ কতদিন—বোধ হয় ত্রিশ বছর সে বাড়ীতে জনপ্রাণী পদার্পণ করে নি। ছাদের মাথায় কুঁচকাটার জঙ্গল । বট-অশ্বখ গাছের স্বাভাবিক ভিড় । কেউ আসে ন!—বড় মামার ছেলেরা কেউ কলকাতায় থাকে, কেউ আসামে থাকে | আর বড় মামার সেই যে জ্যাঠামশাই, হাততালি দিয়ে যিনি হেসেছিলেন–র্তাদের বৃহৎ বাড়ীটাও জঙ্গলে একেবারে ভরে গিয়েছে। বড় বড় সেকালের লোহার তালা দেওয়া আছে দরজাতে। তালা ঠিক আছে, কবাটগুলো খুলে শেকলের অবলম্বনে মাত্র ঝুলচে। দোতলার খোলা ও ভাঙা জানালা দিয়ে ঠাকুরদিদিমার হাতের সাজানো হাড়ি-কলসী এখনো তাকের ওপর সাজানো দেখা যাচ্চে । আজ চল্লিশ বছরের ওপর হল এগুলো আমনি সাজানো রয়েচে । ঠাকুরদিদিমা চল্লিশ বছর মরেচেন। দাদজীর একমাত্র পুত্র, নাম তার ছিল রামলাল, তাকে আমার আবছায়া মনে হয়। দার্জিলিংয়ে চাকরী করতেন, খুব স্বপুরুষ ছিলেন । দাদজীর মৃত্যুর সাত বৎসর পরে একদিন দাৰ্জিলিং থেকে প্রেরিত এক টেলিগ্রামে তার মৃত্যু-সংবাদ এলো। আমার তখন এগার বছর বয়েস । 鱷 সেদিনকার কথা আমার বডড মনে আছে। আমার আপন দিদিমা তখন ডাল রান্না করছিলেন, তাও মনে আছে । দুপুর বেলা, তিনি রান্না ফেলে ছুটতে ছুটতে গেলেন ওদের বাড়ীতে। আমিও গেলাম দিদিমার সঙ্গে । গিয়ে একটি করুণ দৃপ্ত দেখলুম। সেই দৃশ্বের জন্যেই সেই দিনটি বড় মনে আছে আমার। দেখি যে রামলাল মামার স্বন্দর তরুণী বধু উঠানে দাড়িয়ে আছেন। তিনি ডাকসাইটে বদরা ছিলেন মামার বাড়ীর দেশে তখনকার আমলে। উঠোনে এক উঠোন লোকের মধ্যে তিনি কাঠ হয়ে দাড়িয়ে আছেন, কাদচেন না । কে তাকে গঙ্গায় নিয়ে গিয়ে স্নান করিয়ে,