পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী శ్రీgలి সাধ তো আছে, হাতেই কিছু নেই আজ। দিদিমার স্বর ভারী হয়ে এল। বল্পেন-কাচা লঙ্কা খাবি ? তুলে এনে দেবো ? —না, আমি লঙ্কা খাইনে । —হঁ্যারে, রাজায় রাজায় যে একটা মকদ্দমা বেধেছিল, তা মিটে গিয়েচে ? —কি মকদ্দমা ? কোন রাজায় রাজায় ? —তা তো জানিনে। সবাই বলতে । চাল আক্রা হয়েছিল, কাপড় মেলে না, কেরোলিন মেলে না । কি নাকি রাজায় রাজায় মকদ্দমা হচ্চে সবাই বলতো। মিটেচে ? বড় দিদিমা বিগত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলচেন বুঝলাম। বল্লাম—ই্য, সে মিটে গিয়েচে । আচ্ছা দিদিম!— - —কি ভাই ? —আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েচে জানেন ? —কি হয়েচে ? —স্বাধীন হয়েচে । মানে, আমরা এখন কারো অধীন নষ্ট । ইংরেজ চলে গিয়েচে দেশ থেকে । —মহারাণীর রাজত্ব এখন আর নেই ? মহারাণী ! না, দিদিমাকে কোনো রাজনৈতিক জটিলতার মধ্যে না নিয়ে ফেলাই ভালো । কথাবার্তার ধারা বদলে ফেলার জন্যে বল্লাম—আপনার চলে কি করে ? —ওই দু তিন বিঘে ধানের জমি আছে। কর্তাদের আমলের। প্রজারা বড় ভালো । তাদের কাছে ভাগে দুটো ধান পাই—আর কিছু খাজনা পাই, তাতেই একরকম কষ্টেস্তষ্টে চলে । মুড়ি খাওয়া শেষ হয়ে গেল। বড় দিদিমা ঘটা করে জল দিয়েচেন, চায়ের কথা এখানে উঠতেই পারে না, এখনো দিদিম মহারাণীর রাজত্বেই যখন বাস করেন। বড় দিদিমা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বল্লেন–রামলালকে দেখতে পাই যেন, ছোট দশ মাসের খোকা, ফুটফুটে, এই বড় বড় চোখ–হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্চে । আমার সেই খুকীকে দেখতে পাই, রামলালের খোকাকে দেখতে পাই । কালকের কথা, চোখের সামনে যেন আজও সব ঘোরে । রামলাল আমায় আজওঁ ভোলে নি—বডড ভালবাসতো। অামায় বলতে, ছোট মা, আমি এবার এসে তোমাকে আর তোমার বৌমাকে চাকুরির জায়গায় নিয়ে যাবো । সেই কোন পাহাড়ে। বেডড শীত সেখানে নাকি ? আমি সচকিতে বলে উঠলাম—ও কিসের শব্দ ? বড় দিদিমা দস্তহীন মুখে হেসে বল্পেন—ভয় পেলি নাকি ? ও ঘরে চামচিকে বটাপটি করচে। ও রোজই করে—আমার ও সব সয়ে গিয়েচে । শুধু তাই ? বাড়ীতে বড় বড় সাপ । বাস্তু। ওঁরা কিছু বলেন না । হয়তো বিছানায় শুয়ে আছি, রাত্তিরে গায়ের ওপর দিয়ে চলে গেল ।