পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O88 বিভূতি-রচনাবলী সভয়ে বলে উঠলাম,—বলেন কি ! - —বলচি কি। প্রায়ই দেখি । ঠাণ্ড হিমমত গায়ে লাগে, তখন বুঝতে পারি। কি বলবে, সবই আদেষ্ট ভাই । নইলে অমল সোনার রামলীল আমায় ফাকি দিয়ে যাবে কেন ? সতীন-পো বলে কেউ বলতে পারতো না । নিজের পেটের ছেলেও অত ভালবাসে মা । আজকাল তো অনেক দেখতে পাচ্চি। বিয়ে করে এনে আমায় বল্লে—ম, তোমার দাসী নিয়ে এলাম। আমি বল্লাম—না রে, অামার দাসী কেন, সংসারের লক্ষ্মী | হেসে বল্লে—না মা, সংসারের লক্ষ্মী তুমি থাকতে আবার কে মা ? বেশ মনে আছে—স্থর্য্যি পাটে বসেচে, আষাঢ় মাসের লম্ব দিন, বেী নিয়ে এসে আমার খোকা রামলাল দুধে-আলত পিড়িতে দাড়ালো— বড় দিদিমা কেঁদে ফেরেন। আমি সাধনা দেবার কথা বল্লাম অনেক। নিজেই বুঝলাম সব বৃথা । আমি এবার উঠি । যতক্ষণ থাকবে, উনি রামলালের কথা অনবরত বলতে থাকবেন। এতদিন বোধ হয় শ্রোতা পান নি—কতকাল মনের মত শ্রোতা পান নি কে জানে ! চোখ মুছে বল্লেন—তবুও আছি, কর্তা তো চলে গিয়েচেন, তাদের ভিটেতে সন্দেৰেল পিদিমটা দিচ্চি—এই ভেবে মনকে বোঝাই । আজ আমার নাৎবোয়ের পিদিম দেওয়ার কথা, শাখ বাজানোর কথা— আমি দিদিমাকে প্রণাম করে বিদায় নিলাম। কোথায় হুতুম প্যাচ ডাকচে যেন দুর্গমণ্ডপের জঙ্গলে । জ্যোৎস্নার আলোয় এই প্রাচীন ভগ্ন অট্টালিকা আর কালমেঘের গোয়ালেলতার জঙ্গল রহস্যময় দেখাচ্চে । কত কালের কত ইতিহাস এদের গায়ে লেখা । পিছন ফিরে আবার দেখলাম, বড় দিদিমা বাইরের রোয়াকে এসে দাড়িয়ে আমায় গমনপথের দিকে চেয়ে আছেন । কতদিন এই ইটের কারাগারে বন্দিনী থাকবেন দিদিম ? পাষাণী অহল্যার উদ্ধারের আর কত বিলম্ব কে বলবে। অবিশ্বাস্ত্য চক্ষুকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । আমি দরিদ্র স্কুল-মাস্টার । চাকুলিয়া এরোড্রোমের চিফ, এনজিনিয়ারের তক্‌ম-পরা উর্দিঅঁাট চাপরাসী নামলো যে স্টেশন-ওয়াগন থেকে সে স্টেশন-ওয়াগন আমার খোলার বাড়ীর দোরে কেন ? এগিয়ে গেলুম ! কি ব্যাপার চাপরাসী সাহেব ? কোথা থেকে আসা হচ্ছে ? ভুল করনি তো ? —আপকো নাম আছে চাটর্জি বাৰু? ইস্কুল-কা মাস্টার ? একঠো চিটি হায় বড় সাবক, আপকা নামমে।