পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ఆ8 বিভূতি-রচনাবলী আমাকে বলে গেল—ঠাণ্ডায় আর বেশিক্ষণ ব'সে থেকে না, বোখার এসে যাবে। ত-ছাড়া এত রাত্রে ফটকের বাইরে বসে থাকাও নিরাপদ নয়, বাঘ না আসে, ভালুক আসতে পারে। আমি পেছন থেকে ডেকে বল্লাম—শুনুন, ও মাসীম ! বাঘ দেখেচেন এখানে কোনোদিন ? so —দু-তিন দিন। বড়কা বাঘ। রাচি থেকে আসবার পথে দেখেচি, মোটরের হেডলাইটের সামনে । এই ফটকের বাইরে এই রাস্তার ওপরে সন্ধের পর দেখেচি। তুমি চলে এসো—“শোনো আমার কথা ? —যাচ্চি এখুনি । অনসূয়া চলে গেল, কিন্তু আমি তখনি উঠতে পারলাম না । নির্জন জ্যোৎস্না-রাত্রের শোভার সঙ্গে মিশে গেল হারানো-মায়ের কথা । মেয়ের হচ্চে, আসলে মা, তারপর অন্যকিছু। কি ভালো লাগলো সে-রাত্রে অনস্বয়া বাঈয়ের স্নেহসিক্ত ওই সামান্য দুটি কথা । তারপর আমি একা কতক্ষণ তোরণের বহির্ভাগে সেই বেদিটায় বসে রইলাম। হু-হু বাতাস বইচে, সপ্তপর্ণ-পুষ্পের উগ্র স্ববাস ভেসে আসচে বনের দিক থেকে, হৈমন্ত্ৰীজ্যোৎস্নাঙ্গাত এই বনান্তস্থলী স্বপ্ন-পুরীর মত মায়া বিস্তার করেচে এই বৃদ্ধ রামলালের মনে, অনস্বয়া বাঈয়ের মনে, সাবিত্রীর মনে••• - কিন্তু আমার এ বিলাস কেন ? ওরা বড়লোক, ওদের সব সাজে, সব মানাবে। আমি এখানে পড়ে থাকবে, ওদের মায়ায়, ভরহেচ, নগরের নাগরিকের অধিকার নিয়ে—তাতে কি আমার পেট ভরবে ? বাড়ীতে আমার আত্মীয়স্বজন আছে, আমায় বিয়ে-থাওয়া ক’রে সংসার করতে হবে... মেয়ের বিয়ে, ছেলের পৈতে, ছেলের লেখা-পড়ার ব্যবস্থা, সবই করতে হবে আমাকে । এখানে দুটি বেলা শুধু উদর পূরণের জন্য পড়ে আছি, বেতনের দাবী করবো কোন মুখে । কোনো কাজই এখানে করি না, কেবল সাবিত্রীকে একট-আধটু পড়ানো ছাড়া । তার বদলে তো এর রাজভোগ দু'বেলা জোগাচ্চে । যেতম হয়তো একদিন । কিন্তু বড় জড়িয়ে পড়েচি এদের সকলের মায়ায় । বৃদ্ধ রামলাল ব্রাহ্মণকে আমার বুড়ে বাবার মত মনে হয়। সেইরকম খামখেয়ালী, সেইরকম স্নেহশীল । সাবিত্রীকে ছোট বোনের মত লাগে। অনস্বয়া বাঈ নিতান্ত সরলা মহিলা, তেমনি স্নেহময়ী। মা মারা যাওয়ার পরে এমন স্নেহযত্ব আমি নিজের মামার বাড়ী পাইনি, কাকার বাড়ী পাইনি, কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়ী পাইনি। অনাত্মীয়-জগতের নির্মমতার মধ্যে যেতে ইচ্ছে হয় না, আর শুধু সেইজন্যেই যাই যাই ক’রেও এতদিন যাওয়া হয়নি। অনেক রাত্রে এসে শুয়ে পড়লাম। সঙ্গে-সঙ্গে গাঢ় নিদ্রা । এই ভাবেই দিন কাটে । আলস্য এসে জোটে, কোনো সঙ্কল্পই দানা বাধে নHকাজে পরিণত করা তো দূরের কথা।