পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী €ఆ4 সে রাত্রে বুড়ে। আমায় বল্লে—বেট, তুমি এখানে রইলে । সব ভার তোমার ওপর। এ জায়গাতে লোক বসাবে। বড় স্বন্দর জায়গা এটা। তোমরা ছেড়ে না। —আপনি মনে ভয় খাচ্চেন কেন ? অস্থখ সেরে যাবে। আমি রাচি চলে যাচ্চি এখুনি । ডাক্তার আনি— —ও-সব বাত ছোড়ে । আমার বড় মুখ চৈন সে দিন বীত গিয়া এই বনের মধ্যে । তুলসীজি বলিয়েসেন—শোভিত দণ্ডক কি রুচি বনী— —আচ্ছা থাকু ও-সব কথা । এখন আমাকে ডাক্তার আনতে যেতে হবে। শেষরাত্রে রামলাল শেষ-নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে। কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মৃত্যুর দু ঘণ্টা আগে, নয়তো ও ঠিক ভরহেচ, নগরের কথা বলতে । এর পরের কথা খুব সংক্ষিপ্ত। অনস্বয়ার স্বামী এসে এদের নিয়ে গেল। অত-বড় বাড়ীতে চাকর-বাকর ছাড়া কেউ রইলো না। আমি ছিলাম, বৃদ্ধ রামলালের মৃত্যুর সময়ের ছবি মনে ক’রে । অনস্বয়া বাঈ আমাকে থাকতে বলেছিল। থাকতাম হয়তো, দুমাস পরে ভরহেচ, নগর বিক্রি হয়ে গেল ওদের ফৰ্ম্মের দেনার দায়ে । বন আবার নগরীকে গ্রাস করেচে । আবির্ভাব জুলালদের বাড়ীর পেছনে একটা বড় বঁাশবাগান । তার পেছনে ক্রোশখানেক ডাঙা মাঠ। এই মাঠে বহুকাল থেকে চাষবাস হয় না, নীলকুঠির আমল চলে যাওয়ার পর থেকে এই সব মাঠ অনাবাদি পড়ে আছে—এই মাঠের পর ভাবনহাটি নামে একটি ক্ষুদ্র চাষা—গা । দুলাল কলকাতায় থাকে, ভবানীপুরে তাদের নিজেদের বাড়ী । কিন্তু আজ ক’মাস কি যেন একটা হয়েচে, বাড়ীর সবাই এসে আছে দেশের বাড়ীতে । বেশ লাগছে সবারই। এমন সময় নামলো ভীষণ বর্ষা । দিনরাত একঘেয়ে বৃষ্টি হচ্চে সমানে । মাঠে ঘাটে থৈ-থৈ করচে বর্ষার জল । তোড়ে জলস্রোত নেমে চলেচে নাবাল জমি বেয়ে মাঠের দিকে । পুবে হাওয়ায় শীত করচে সবারই, ছেড়া ভিজে কাপড় গায়ে দিয়ে চাষী মজুর ক্ষেতে ধান পুতচে । 聽 - অমনি জুলালের জ্যাঠাই-মা চঞ্চল হয়ে উঠলেন । —বাবা গে, না খেয়ে মম, কলকাতায়, না কয়লা, না কিছু। সেও ছিল ভালো। এখানে আমার মাছ দুধে দরকার নেই, ঢের হয়েচে । এদিকে যাই জোক, উদিকে যাই মশা, সাপ, কাদা। একটু বেড়াবার জায়গা নেই, দুটাে লোকের মুখ দেখবার জো নেই। সিনেমা দেখিনি আজ চার মাস। না একটা সিনেমা, না কিছু। এমন পোড়ারমুখো দেশে মানুষ থাকে! জাঠতুতো বোন কমলা বলে—সত্যি মা, কত ভালো ভালো ছবি যে হয়ে গেল কলকাতায় । ওরে যাত্রী’ বঞ্চিতা' 'সৰ্ব্বহার’—চমৎকার চমৎকার ছবি ।